ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ভোটপরবর্তী বিএনপি রঙ্গ ও বুদ্ধিবৃত্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৫ মে ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ভোটপরবর্তী বিএনপি রঙ্গ ও বুদ্ধিবৃত্তি

নির্বাচনের পর বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার দোষারোপের ভঙ্গি ও কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট, অবস্থা তার নিয়ন্ত্রণে নেই। কথায় বলে, যত গর্জে তত বর্ষে না। এখন দেখছি গর্জনও ক্ষীণ হয়ে আসছে। আগে কী হতো? কোন দল বা শক্তিকে অপকৌশলে কিংবা ভুলভাবে পরাজিত করা হলে, তারা রাস্তায় নেমে আসত। তাদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায় আর অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলত। আইয়ুব খান থেকে এরশাদ পর্যন্ত সব স্বৈরশাসক বা সেনানায়ক এই জাতীয় প্রতিবাদেই ভেসে গিয়েছিল। তাদের দশক পূর্তির ভাগ্য হয়নি। জনরোষ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। সে যত বড় জেনারেল বা প্রভুই হোক না কেন, মাথা নুইয়ে বিদায় নিতে হয়। আমি বলছি না, মেয়র নির্বাচন এবার একশ’ ভাগ নিরপেক্ষতা পেয়েছে। যে সমস্ত বাদানুবাদ, প্রতিবাদ, নথি ও খবর বেরুচ্ছে, তাতে এর কপালে চাঁদের কলঙ্ক আছে, থাকবে। কিন্তু বিএনপি বা তাদের দোসর কিছু মিডিয়া আদাজল খেয়ে যেভাবে সবকিছু নাকচ করে দিতে চাইছে, তা যদি সত্যি হতো, এদ্দিনে আওয়ামী মেয়রদের পদ থাকত কিনা সন্দেহ ছিল। তারা হাসি-খুশি চেহারায় দিলখোলা মনে ভালই আছেন। বিএনপি একটা বিষয় ভুলে যায়, তাদের অবস্থা এখন পুরনো জমিদার বাড়ির মতো, শেওলা ধরা দেয়াল, পুকুরে কচুরিপানা, ঘরে অস্বস্তি। বাইরে বেরুলে আগের মতো কেউ সালাম-আদাব ঠোকে না। সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও অনেকে দেখতে পায় না। আগে বিচার-সালিশের জন্য কিছু পাবার লোভে উঠোনভর্তি মানুষ এলেও এখন ফাঁকা। এই বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রামে লোক জড়ো করে সমাবেশ ও মিছিল করতে পারছে না। তো দ্রোহ করবে কিভাবে? মেয়র নির্বাচনে মওদুদীয় পরামর্শে সরে দাঁড়ানোর মতো আজগুবি সিদ্ধান্ত যে আগেই ঠিক করা হয়েছিল, সেটার ফোনালাপও এখন বাজারে। চট্টগ্রামের প্রার্থী মনজুর সাহেবের চোখে পানি আর চেহারায় ছিল চরম হতাশা। তার কাঁদো কাঁদো সুরতের পাশে বসে উস্কানি দেয়া আমীর খসরুর কথা তিনি মানেননি। বরং নিন্দুকেরা বলছে, কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম অংশটি তার সঙ্গে বেইমানি করেছে। দুপুরের আগে আগে প্রত্যাহারের নাটক না করলে কী হতো বলা মুসকিল। একটা বিষয় খুব পরিষ্কার, বিএনপি এখন বাংলা প্রবাদ- এক পা এগিয়ে দু’পা পেছানোর দলে। হুমকি-ধমকি বা তোড়জোড় করে বাইরে আসে বটে, রণে ভঙ্গ দিয়ে সন্ত্রাস বা ধ্বংসের পথ বেছে নিয়ে ফের ঘরে ঢুকে যায়। বলাবাহুল্য, এ প্রক্রিয়ার ওস্তাদ জামায়াতই তাদের গুরু। তাদের খপ্পরে পড়ে বিএনপি এখন জনবিচ্ছিন্ন। প্রতিবাদের বদলে গর্জন সার। বিএনপির শেষ ঘণ্টা বাজাতে সচেষ্ট কিছু মিডিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। জোর করে আওয়ামী বিরোধিতা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা আর স্বার্থপরতার কারণে এরা এখন দিশাহারা। এদের প্রচার প্রচারণার অপকৌশলে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। জীবন ও আচরণের এমন বৈপরীত্য কি করে সম্ভব? ভোটের বাক্সে এরা এমাজউদ্দীনের সমর্থক। এমাজউদ্দীনরা রাষ্ট্রচিন্তক, পৌরবিজ্ঞানের অধ্যাপক বটে, তবে ইতিহাস ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানেন না। দায়িত্ববোধ থাকলে বেগম জিয়াকে সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দিয়ে গণতান্ত্রিক করে তুলতেন। পেট্রোলবোমা, আগুন ও সন্ত্রাসের বিপরীতে গণতন্ত্রের পথে চলার পরামর্শ দিতেন। আবারও বলছি, এদেশে কোন নির্বাচনই কোনদিন কোনকালে একশ’ পার্সেন্ট নিরপেক্ষ বা সঠিক হয়নি। দেশের মানুষ বোকা বা পাগল নয়। তারা বিএনপি আমলের ভোটের চেহারা ভোলেনি। মেয়র নির্বাচনের আগে বেগম জিয়ার গুলশান ত্যাগ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সকালবেলা বর্জনের নাটক আর মওদুদ-এমাজউদ্দীনের নেপথ্য ভূমিকাই বরং সবকিছুকে রহস্যময় করে তুলেছে। কেন তিনি অবরোধের মতো একটি জটিল বিষয়েও পরিষ্কার কিছু বলতে পারছেন না। অবরোধ ভোটের দিন নেই। অন্যদিন আছে কিনা নেই, তিনি জানেন না। এমন সব কথা কি প্রলাপ নয়! কখন মানুষ প্রলাপ বকে? খালেদা জিয়া সে অবস্থায় পৌঁছে গেছেন। এখন বিএনপি ও জামায়াতের ভেতর আগের সেই প্রেম বা পিরিতি নেই। এবারের মেয়র নির্বাচনে জামায়াত শেষ তক লড়াই করলেও, বিএনপি রণে ভঙ্গ দিয়ে প্রমাণ করল, চেনা শত্রুর চাইতে পরোক্ষ দুশমন ভয়ঙ্কর। একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতে পারি না- এতকিছুর পরও জাতীয়তাবাদী নামে পরিচিত মূলত বাংলাদেশ বিরোধীরা এত ভোট পায় কিভাবে? একি আমাদের দোদুল্যমান মধ্যবিত্ত বাঙালীর আসল চেহারা না পথভ্রষ্ট বাঙালী জাতীয়তাবাদের কঙ্কাল? এতকিছুর পরও দিকভ্রান্ত ভারতবিরোধী হিন্দু বিরোধী আর পাকপ্রেমীদের মদদপুষ্ট বিএনপিই হয়ে রইল বড় ফ্যাক্টর। একবারও তারা অগ্নিদগ্ধ স্বজনদের কথা আমলে নিল না। প্রশ্ন জাগে, নব্য রাজাকার ও বদলে যাওয়া মিডিয়াগুলোর নেপথ্যে থাকা একদা বাম কাম ডান বা মধ্যপন্থীরা আসলে কি চায়? এদের কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে, আহমদ ছফার কথাই সত্য। কথিত বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে যেমন দেশ স্বাধীন হতো না, এদের কথা মানলে দেশ কোনদিনও এগোতে পারবে না। তবু সব গোলমেলে, সব কুয়াশাঘেরা। ভোট যারা পাচ্ছেন, তাদের কথা বা ভাষাও বুঝতে পারে না জনগণ। এদের কারণেও অনেকে ভুল পথে দৌড়াতে শুরু করে। কবে যে উদ্ধার আমাদের, কে জানে! [email protected]
×