ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় কর্মযজ্ঞে পুরুষের পাশাপাশি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩০ মার্চ ২০১৫

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় কর্মযজ্ঞে পুরুষের পাশাপাশি

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ ‘জগতের যত বড় বড় জয়, যত বড় বড় অভিযান/মাতা-ভগনি ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।’ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এ চরণ দুটিই সাক্ষ্য দেয় প্রতিটি সাফল্য, বিজয় বা মহান সৃষ্টির পেছনে নারীর অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যুগে যুগে পুরুষের পাশে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছে, ভয়কে জয় করার সাহস সঞ্চার করেছে। শুধু প্রেরণা নয়, অনেক নারী নিজেও করে দেখিয়েছে মহান সব কীর্তি, বিশ্বকেও দিয়েছে নেতৃত্ব। বেগম রোকেয়া, নারীনেত্রী ইলা মিত্র দেখিয়েছেন কিভাবে পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, প্রীতিলতা দেখিয়েছেন কিভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম দেখিয়েছেন কিভাবে রাজাকারদের বিচার করতে হয়। বাংলাদেশের নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি মাঠে কাজ করে যাচ্ছে দল বেঁধে। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন বৈষম্য ও বঞ্চনার মধ্যে রেখে ক্ষুধামুক্ত, আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ অসম্ভব। বিশ্বাস ও চেতনা থেকেই পরিবর্তনের জন্য সুপ্তশক্তির বিকাশ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে নারীরা। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নারীরাও এখন ঘরে বসে নেই। স্বামী সন্তানের পাশাপাশি জীবনের ভাগ্য তথা দেশের উন্নয়নের জন্য দল বেঁধে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। চরআলগী গ্রামের স্কুলছাত্রী রতœার মতো ফিরোজা খাতুন, চামেলী আক্তার, হামিদা খাতুন, রওশন আরা শুধু নিজের জমিতে কাজ করে না, অন্যের জমিতেও শ্রম দেয় তারা। নারীর কাজ করার প্রবণতা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় বেশি। কারণ তারাই ক্ষুধার তাগিদে কোনকিছুই তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষি খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ নারী কাজ করে। তবে নারীকে বঞ্চিত করা হয় প্রাপ্য মজুরি থেকে। প্রায়ই তাদের মজুরি কম দেয়া হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীরা যেভাবে কাজ করে, সে তুলনায় মজুরি পায় পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম। তিনি আরও বলেন, পুরুষ যতদিন না নারীকে তার সহযোগী ভাবতে শিখবে, ততদিন এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। নারীর মুক্তির জন্য প্রয়োজন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন। বাংলাদেশে সংবিধানে সামাজিক জীবনের সাফল্য ক্ষেত্রে নারীজীবনে সকল ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার স্বীকৃত আছে। কর্মক্ষেত্রেও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ (আইএলও) ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন কনভেনশন স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘ ১৯৭৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য নির্মূলের লক্ষ্যে একটি কনভেনশন সিডও গ্রহণ করে। নারীর সমঅবস্থান ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সর্বপ্রকার সহিংসতা দূরীকরণ, মাতৃত্ব অধিকার, আইন ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার্থে এটি করা হয়। সিডিও অনুসারে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই কর্মক্ষেত্রে যদি নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা যেত, তবে সামাজিক উন্নয়নেও সফলতার সুফল পেত বাংলাদেশ। যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী দারিদ্র্যের মাঝে বসবাস করছে, সেখানে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব নতুন করে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। নারীর কাজ করার প্রবণতা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যায়। কারণ ক্ষুধার তাগিদে তারা কোনকিছুই তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষি খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ নারী কাজ করে। তবে কৃষি খাতে নিয়োজিত নারীর মধ্যে প্রায় ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ নারী বিনাশ্রমে কাজ করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীরা যেভাবে কাজ করে তার তুলনায় মজুরি পায় পুরুষ শ্রমিকের চাইতে কম। তিনি আরও বলেন, পুরুষ যতদিন না নারীকে তার সহযোগী ভাবতে শিখবে ততদিন এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নারী মুক্তির জন্য প্রয়োজন পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন।
×