ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ পাকিদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ পাকিদের

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ পরিপূর্ণ এ্যাডিলেড ওভালের গ্যালারি, দূরদর্শন মিলিয়ে প্রায় ১শ’ ৩০ কোটি মানুষের চোখ উন্মাদনার ম্যাচে। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে উন্মাদনটা থাকল যথারীতি, অব্যাহত থাকল ইতিহাসের ধারাও, চিরশত্রু ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়া হলো না পাকিস্তানের! ম্যাচের আগে অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক বলেছিলেন, এবার ইতিহাস বদলে দিতে চায় তার দল। কিন্তু হয়নি। উল্টো এ যাবত কালে বিশ্বকাপে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানেই হারল তারা। ঘুড়িয়ে বললে মাঠের নৈপুণ্যে যথারীতি পাকিদের উড়িয়ে দিল চ্যাম্পিয়নরা। ৭৬ রানের বিশাল জয়ে ট্রফি ধরে রাখার মিশন শুরু করল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। টস জয় থেকে শুরু করে ম্যাচের পুরো গল্পটাই আবর্তিত হয়েছে চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ঘিরে। প্রথমে ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলির ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে (১০৭) নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটের ৩০০ রানের পাহাড়, এরপর ৪৭ ওভারে শত্রুদের ২২৪Ñএ ভূলুণ্ঠিত করে ৭৬ রানের বিশাল জয় তুলে নেয়া! বাইরে উন্মাদনার পারদ চড়লেও তাতে রং চড়াতে ব্যর্থ মিসবাহবাহিনী। অনেকটা এক তরফা ম্যাচে হতাশার ইতিহাসটা আরও বড় করল পাকিরা। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ছয়বারের মোকাবেলায় ছয়বারই হার, তবে এবারের হারের ব্যবধানে আগের সব কটিকে ছাড়িয়ে! সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক মঈন খান বলেছিলেন, ভারতকে হারানোর এটাই সেরা সুযোগ। তার ব্যাখ্যা ছিল সম্প্রতি মাঠে ধোনিদের হতাশাজনক নৈপুণ্য। এই ম্যাচের আগে দীর্ঘ আড়াই মাসের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট ও ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়ে প্রস্তুতি পর্যন্ত একমাত্র আফগানিস্তানের বিপক্ষে ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেই হেরেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বিপরীতে দারুণ বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়ে উজ্জীবিত ছিল পাকিরা। অধিনায়ক মিসবাহ তাই ইতিহাসটা বদলে দেয়ার সাহস পেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হলো কোথায়? যে শিখর ধাওয়ান-বিরাট কোহলিরা দিনের পর দিন ব্যাট হাতে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন, সেই তারাই মোক্ষম সময়ে জ্বলে উঠলেন! সমান ৩০০ রান করে ভারত যে শুরুতেই পাকিস্তানকে মানসিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলে তার রূপকার ধাওয়ান-কোহলি ও সুরেশ রায়না। ওপেনিং জুটিতে ৭.৩ ওভারে ৩৪ রান যোগ করেন রোহিত শর্মা-ধাওয়ান। ১৫ রান করা রোহিতকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের প্রথম আনন্দের উপসর্গ এনে দেন সোহেল খান। এরপরই ভারতীয়দের ব্যাটিং-মহড়া। উন্মদনার ম্যাচে ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে নায়ক কোহলি। ১২৬ বলে ৮ চারের সাহায্যে ১০৭ রান করে সোহেলের শিকারে পরিণত হন ভারতীয় ক্রেজি বয়। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে এই প্রথম সেঞ্চুরি করলেন কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। রোহিত ফেরার পর ধাওয়ানের সঙ্গে ১২৯ ও রায়নার সঙ্গে ১১০ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় স্কোরের পথে এগিয়ে নেন কোহলি। অথচ এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ভারতের সেঞ্চুরি-জুটিই ছিল মাত্র দুটি, কাল এক ম্যাচেই যোগ হলো আরও দুটি! কোহলি-ধাওয়ানের ফর্ম নিয়ে সম্প্রতি কম কথা হয়নি। ধাওয়ান ত্রিদেশীয় সিরিজে করেন মোটে ৪৯। ভারতের আগামীর শচীন কোহলির অবস্থা ছিল আরও খারাপ। চার ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ছিল ২৪। দুই জন জ্বলে উঠলেন একেবারে মোক্ষম সময়ে। ফেরার জন্য এর চেয়ে ভাল ম্যাচ আর হতে পারত না। ধাওয়ান ৭৬ বলে ৭৩, রায়না ৫৬ বলে ৭৪ রান করে আউট হলেও ক্যারিয়ারের ২২ আর বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। এছাড়া অধিনায়ক ধোনি ১৩ বলে করেন ১৮ রান। পাকিস্তানের হয়ে সোহেল খান ৫৫ রান দিয়ে সর্বাধিক ৫টি ও ওয়াহাব রিয়াজ নেন ১টি করে উইকেট। জবাবে পাকিস্তানের জন্য কাজটা ছিল খুবই কঠিন। বিশ্বকাপে কখনও এত রান তাড়া করে জেতেনি তারা। ১৯৯২-এ সফল সেই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৬৩ রান তাড়া করে জয়ের নজির ছিল পাকিদের। দলীয় ১১ রানে অভিজ্ঞ ইউনুস খানকে খুইয়ে খেই হারানো পাকিস্তান আর পথের দেখা পায়নি। উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে কেবল ব্যবধান কমিয়েছেন অধিনায়ক মিসবাহ উল হক ৩৯তম হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরিবিহীন সর্বাধিক হাফ সেঞ্চুরিরর নতুন রেকর্ড এটি! শহীদ আফ্রিদির ২২ বলে ২২ উল্লেখ্য। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি ৪টি, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা নেন ২টি করে উইকেট। ‘আমি সত্যি খুব খুশি। শুরুতে আমাদের ব্যাটিং ভাল হয়েছে। ধাওয়ান-কোহলি রানে ফিরেছে, যা বিশ্বকাপে আগামী ম্যাচগুলোতে ভাল করতে সাহায্য করবে। গ্যালারিতে উপস্থিত অগণিত দর্শকদেরও ধন্যবাদ।’ ম্যাচ শেষে বলেন অধিনায়ক ধোনি।
×