ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চোখের জলে-

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

চোখের জলে-

চোখের জল মানেই এক অনুচ্চারিত ভাষা। এত অল্প সময়ে বেশি কথা বলার এই রকম উপায় খুব কমই আছে। চোখের জল অনুভূতি জাগিয়ে তোলে মানুষ মাত্রেরই। খুব মূল্যবান হলো মানুষের চোখের জল। দুঃখ পেলে মানুষের চোখে জল আসে। আবার আনন্দে বা হাসিতেও অনেক সময় জল আসে। বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের, কষ্টের, বেদনার, যন্ত্রণার কান্না দেখে প্রভাবিত না হয়ে থাকতে পারে না। কারণ সেটা বলে দেয় যে, কেউ কষ্ট পাচ্ছে। আর সে কারণেই হয়ত যিনি কাঁদছেন, তাঁকে সান্ত¡না দিই কিংবা সাহায্য করে। বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই চোখের জল দেখে আসছে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, নৃশংসতা, বর্বরতা, ধর্ষণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, শরণার্থী জীবনজুড়ে চোখের জলের ভাষা ছিল যন্ত্রণার, বেদনার। সাম্প্রতিক সময়েও দেশটি আবারও চোখের জল দেখছে। দুঃখের, আনন্দের, বেদনার, যন্ত্রণার, শোকের চোখের জলের রং ভিন্ন হতে পারত। ‘চোখের জলের লাগালো জোয়ার’ কথাটা দারুণ, কিন্তু মানেটা কি জানতেন রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ। একটি জাতি উঠে দাঁড়ায় তিনটি কারণে : মাথার জোরে, গায়ের জোরে, মনের জোরে। যারা খেতে পায় না ভাল করে, তাদের চোখে জল আসে কী করে। এমনিতে গরিবের চোখের জল বেশি হয়। যখন আচমকা ঘাতক বোমা এসে ঝলসে দেয় দেহ, কিংবা আগুনে দগ্ধ করেÑ তখন মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে চোখের জল ফেলার দৃশ্য এই দেশকে দেখতে হয়। কী করুণ, কী দুর্ভাগ্য। শেষ বয়সে একটু প্রশান্তি, আনন্দ, ভালবাসার সময় কাটাতে চান প্রবীণরা। কিন্তু সে সৌভাগ্য হয় না অনেকেরই। নীরবে-নিভৃতে চোখের জলে সময় কাটে। কখনর নিকটজন বিয়োগে চোখে জল আসে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে হয়। মাতৃহৃদয় পিতৃহৃদয়, কেঁদে উঠছে, আহাজারি করছে, তাদের চোখের জল শুকিয়ে যায়নি। অঝোর ধারায় ঝরছে। অপরাধহীন, দরিদ্রজন জানে না নিয়তি কেন এত নির্মম হলো, কেন যন্ত্রণায় নয়ন জলে ভেসে যায়। স্বজনদের ব্যথিত ক্রন্দন কষ্ট বাড়ায় বৈকি! তাই চেতনার ধারায় কান্নার জলে ভাসিয়ে দিয়ে শোকবিদায় জানায় ঔরসজাতকে। অন্যের দুঃখে চোখে জল আসে। কোন্্টা আবার লোক দেখানো অশ্রুবিন্দু। দুঃখ বা সুখের প্রকাশে মাতম চোখের জল অশ্রুবিন্দুতে পরিণত হয়। অশ্রু দিয়ে মনের আবেগ প্রকাশ করার মধ্যে মেকিভাবও মেলে। চোখের জলে নদী বয়ে যায়Ñ এমন উপমা হলেও এর ভেতরের মর্মার্থ অত্যন্ত করুণ। যা দেশজুড়ে ভুক্তভোগীজনদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে। এক এক ফোঁটা যেন এক একটি নদী। চোখের জলের আবার রকমফের রয়েছে। স্বাভাবিক চোখের জল, আবেগগত চোখের জল। নানা কারণে সব ধরনের চোখের জলই মেলে। মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল ভাল লাগার কথা নয়, আনন্দাশ্রু, পুলাকাশ্রু ছাড়া। সবচেয়ে বড় অপচয়ের নাম চোখের জল। ক্রন্দনরত, ক্রন্দনধ্বনি, ক্রন্দন রব, কান্নার রোল, কান্নার শব্দ, হাপুস নয়ন, ছলছল চোখ। ক্রন্দনশীল, অশ্রুময়, অশ্রু, অশ্রুভরা, অশ্রুসজল, ছিঁচ কাঁদুনে দেখা মেলে। তবে কপট কান্নার প্রভাবটাই সমাজে বেশি। কিন্তু রোরুদ্যমান মানুষের রোদনে ধরিত্রী এখনও কেঁপে উঠছে না। অন্যের চোখে জল দেখে এক সময় মানুষেরও চোখে জল আসত। একালে চোখের জলে বন্যা নামে। ভয়ের তাড়নায়ও চোখজুড়ে জলের আভা চিকচিক করে। আবেগমথিত দেশবাসী কাঁদুক। কাঁদলে দেহ, মন হাল্কা হয়। কিন্তু এই কান্নার শেষ কোথায়?
×