
কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (BGDCL)। এটি এক সময়কার বৃহৎ গ্যাস ফিল্ড পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড নামে। পরবর্তী সংস্কার ও সম্পদ পুনর্বিন্যাসের পর এটি এখন একটি গ্যাস বিপণন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কমপ্লেক্স এলাকাটি একদিকে যেমন আধুনিক, অন্যদিকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে আবাসিক ভবন (ফ্যামিলি ও ব্যাচেলর উভয়ের জন্য), ভিআইপি ও সাধারণ রেস্ট হাউস, সুন্দর মসজিদ, খেলার মাঠ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে একটি সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
তবে এই মর্যাদাপূর্ণ কমপ্লেক্সের মাঝখানে থাকা পুকুরটি এখন অচলাবস্থায়।এক সময়ের স্বচ্ছজলাধার পুকুরটি আজ পরিণত হয়েছে যেন ‘আমাজন জঙ্গল’। পানি ভর্তি হলেও, সেখানে কোনও ধরনের পরিচর্যা বা ব্যবস্থাপনা নেই। স্যাঁতসেঁতে পানি ও কচুরিপানায় টইটুম্বুর আগাছায় ভর্তি চারপাশ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনায় এটি এখন মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আশপাশের গ্রামবাসীর অভিযোগ, এই পুকুরের কারণে এলাকায় ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, এই পুকুরটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় স্থানে পরিণত হতে পারত। কমপ্লেক্স এলাকার প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে সাঁতার শেখানোর আয়োজন করা যেত অনায়াসে। কারণ, জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামেও সাঁতার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে শিক্ষার্থীরা আজ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
সরকারি সম্পত্তি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অভাবেই এই পুকুরের এমন করুণ দশা।একদিকে যেখানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি হিসেবে বাখরাবাদ গ্যাসের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানিক সম্পদ ব্যবহারে এই ধরনের অবহেলা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চিহ্ন বহন করে।
এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে এই পুকুরটিকে উদ্ধার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কিংবা শিক্ষার্থীদের বিনোদনমুখী প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এতে যেমন সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে, তেমনি শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ উভয়ই উপকৃত হবে।
বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কাছে প্রশ্ন সম্ভাবনার এই পুকুরটি আবার কবে ফিরবে তার হারানো যৌবনে?
আফরোজা