স্বাস্থ্য সেবায় ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা, টেস্ট বাণিজ্য ও রোগীর সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ করে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। একইদিন সন্ধ্যায় খবর এসেছে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সেই বির্তকিত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে গৌরনদী থেকে বদলী করা হয়েছে।
এ খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে গোটা উপজেলাবাসীর মধ্যে স্বত্তি ফিরে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলাবাসী তাদের স্বত্তি প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক প্রশাসন ডা. এবিএম আবু হানিফের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ওই প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, বির্তকিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামানকে বরিশাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজির লেকচারার হিসেবে বদলী করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডি (অতিরিক্ত) সহকারী সার্জন মেডিক্যাল অফিসার মো. শাহতা জারাব সালেহিনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে স্ব-স্ব কর্মকর্তাকে তাদের বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে গৌরনদী উপজেলার সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে ‘মনিরুজ্জামান হটাও, স্বাস্থ্য সেবা বাঁচাও’ শ্লোগানে উপজেলা হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করা হয়। আন্দোলনকারী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মানববন্ধন চলাকালীন ডা. মনিরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কতিপয় দালালরা মানববন্ধনের সামনে দিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে একাধিকবার মহড়া দেয়। এরপরই আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আশোকাঠী বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় মহাসড়কের উভয়পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবরপেয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়।
পরে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডা. মনিরুজ্জামানকে গৌরনদী থেকে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিক্ষুব্ধরা দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এ সময় কৌশলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক।
উল্লেখ্য, গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছেন। হাসপাতালে সবধরনের সরকারি ল্যাব থাকা সত্বেও সেখানে প্রয়োজনীয় টেস্ট হয় না। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন গাণিতিক চিহ্ন লিখে বাহিরের নির্দিষ্ট নামসর্বস্ত্র প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট করানো হয়। যেখানে তিনি (মনিরুজ্জামান) ৫০% কমিশন পেয়ে থাকেন।
আঁখি
