ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

দালালের মাধ্যমে সীমান্ত গলিয়ে দেশে ঢুকছে কারা?

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৪০, ১৩ জুলাই ২০২৫

দালালের মাধ্যমে সীমান্ত গলিয়ে দেশে ঢুকছে কারা?

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ধনিরামপুর সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ৫ জন মানুষ প্রবেশ করার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করা পাঁচজনকে নৌকা যোগে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছে দালাল চক্রটি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, প্রবেশকারী এই ৫ জন কোন দেশের নাগরিক? এ প্রবেশের ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১২ জুলাই) সকালে।

স্থানীয়রা জানান, ধনিরামপুর সীমান্ত এলাকাটি দুর্গম এবং গঙ্গাধর নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই সীমান্তে নেই কাটাতারের বেড়া। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি দালাল চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভারতে থাকা বাংলাদেশিদের সীমান্ত পার করে নিরাপদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়। শনিবার ভোরে ৫ জন মানুষকে ভারতের আসাম রাজ্যের তিস্তা ও বাংলাদেশের ধনিরামপুর সীমান্ত দিয়ে পার করে আনে দালাল চক্রটি। তাদেরকে প্রথমে একটি পাটক্ষেতে, পরে স্থানীয় একটি বাড়িতে রাখা হয়।

এ খবর পেয়ে স্থানীয়রা ওই পাঁচজনকে আটক করলে বিজিবি এসে তাদেরকে উদ্ধার করে সবুজ নামের একজনের নৌকায় তুলে দেয়। পরে নৌকাটি তরিরহাট ঘাটে এলে ইজারাদার তাদের নৌকা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় বিজিবি এসে তাদের নৌকা ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ধনিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পাঁচজন লোক নিয়ে আসে সবুজ, মিজানুর ও ফজর আলী। প্রথমে তারা তাদের পাটক্ষেতে রাখে। তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়েছে বলেও জানতে পেরেছি। মানুষজন বিষয়টি জানতে পারলে দ্রুত তাদের নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। এ সময় বিজিবি উপস্থিত ছিলেন। বিজিবি লোকজনকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তাদের মোবাইল ফোনে ভারতীয় আইডি কার্ডের ছবি দেখেছি আমি। বিজিবি তাদের নৌকা যোগে যেতে সহযোগিতা করেছেন। তবে ভাটিতে নৌকাটি আটক হয়েছে বলে শুনেছি।

ভাটিতে তরিরহাট ঘাটের ইজারাদার সহিদুল ইসলাম বলেন, সবুজের নৌকায় ভারত থেকে আসা পাঁচজন লোক যাচ্ছে শুনে আমি ও গ্রাম পুলিশ নৌকাটি আটকাই। এ সময় তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, ঢাকায় যাবেন। তারা কোন দেশের নাগরিক জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলেননি। আইডি কার্ড আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, তাদের কাছে আধার কার্ড আছে। এ সময় বিজিবি এসে আমাদের সাথে তর্কে জড়ায়। পরে নৌকাটি নিয়ে তারা নুনখাওয়ার দিকে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, সবুজ, মিজানুর ও ফজর আলী আড়াই লাখ টাকা নিয়ে এই কাজ করেছেন।

অভিযুক্ত মিজানুর রহমান জানান, ভারত থেকে আসা পাঁচ নাগরিকের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। টাকা-পয়সা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই পাঁচজনের সঙ্গে তার রাস্তায় দেখা হয়েছিলো। তারা পথ জানতে চেয়েছিলো, আমি তা দেখিয়ে দিয়েছি।

নৌকা দিয়ে বহন করা সবুজ মিয়া জানান, আমার নৌকা তারা ৫ শত টাকা ভাড়া করেছিলো। আমি তাদের মহসিনের চরে নামিয়ে দিয়ে এসেছি। তারা ঢাকার লোক বলে জানতে পেরেছি। আমার নৌকার পেছনে বিজিবির নৌকা ছিলো কিনা, আমি তা লক্ষ করিনি।

আরেক অভিযুক্ত ফজর আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার বড় ভাই আব্দুল মালেক জানান, ধনিরামপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ পাঁচজনকে পাঠিয়েছে, তাদের বিজিবি নিয়ে গেছে। আমার ভাই এসবের কিছুই জানে না।

তবে এসব ঘটনার সবকিছুই অস্বীকার করেছেন স্থানীয় মাদারগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার কিশোর। তিনি বলেন, আমাকে এ ধরনের ঘটনা কেউ বলেনি। টহল দল বাইরে রয়েছে। এমন ঘটনা থাকলে জানতাম।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×