ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

‘পাখি প্রজাতির ডাইনোসর’ বিলুপ্ত মোয়া পাখি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

‘পাখি প্রজাতির ডাইনোসর’ বিলুপ্ত মোয়া পাখি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিশাল আকারের মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান Colossal Biosciences। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যেটি ফিরে আসবে সেটি আদতে আসল মোয়া নয়, বরং তার জেনেটিক অনুকরণে তৈরি একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতি।

Colossal গত ৮ জুলাই ঘোষণা দেয়, নিউজিল্যান্ডে পাওয়া South Island Giant Moa (বৈজ্ঞানিক নাম Dinornis robustus) পাখিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ফের জীবন্ত করা হবে। প্রায় ১২ ফুট (৩.৬ মিটার) উচ্চতার এই পাখিটি ছিল নয়টি বিলুপ্ত মোয়া প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়, যা প্রায় ৬০০ বছর আগে মানুষের শিকারের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

তৈরি হবে জেনেটিক হাইব্রিড

Colossal এর দাবি অনুযায়ী, বিভিন্ন বিলুপ্ত মোয়া প্রজাতির হাড় থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে তা আজকের জীবিত কাছাকাছি পাখি—ইমু অথবা টিনামু—এর ডিএনএ এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর সেই ডিএনএ পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট পাখির কোষে প্রতিস্থাপন করা হবে। পরে সেই কোষ একটিকে ‘সারোগেট’ মা পাখির শরীরে প্রতিস্থাপন করে নতুন জীব জন্ম দেওয়া হবে।

তবে জন্ম নেওয়া সেই পাখি আর প্রকৃত মোয়া থাকবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ অধ্যাপক ফিলিপ সেডন বলেন, ‘বিবর্তন ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট থেকে শত শত বছর বিচ্ছিন্ন কোনো প্রাণীকে সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। নতুনটি হবে কেবল মোয়া সদৃশ।’

আগেও বিতর্কে ছিল Colossal

Colossal এর আগের দাবিও ছিল সমালোচনার মুখে। তারা ‘dire wolf’ ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল, যা পরে প্রমাণ হয় কিছুটা সম্পাদিত সাধারণ ধূসর নেকড়ে। সমালোচকরা একে বলছেন—একটি বিলুপ্ত প্রাণীর ‘চেহারাসদৃশ’ সংস্করণ।

এছাড়া উল ওয়ুলি ম্যামথ, ডোডো এবং তাসমানিয়ান টাইগার ফিরিয়ে আনার প্রকল্পও তাদের রয়েছে, যেগুলো নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ট্রেভর ওয়ার্থি বলেন, ‘যখন আজও অসংখ্য প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে, তখন এই ধরনের ফ্যান্টাসির মতো প্রকল্পকে সঠিক বলা যায় না।’

মোয়া কি হুমকি হবে মানুষের জন্য?

Colossal-এর দাবি, এসব হাইব্রিড পাখিকে কোনো বন্য পরিবেশে বা চিড়িয়াখানায় ছাড়া হবে না; বরং সীমিত ও নিরাপদ প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকায় রাখা হবে। তবে বিজ্ঞানী ওয়ার্থি জানান, ‘যদি এই পাখিগুলো পালিয়ে যায়, তবুও তারা মানুষের জন্য হুমকি নয়—তবে ভয় পেলে লাথি মেরে আহত করতে পারে!’

‘ডি-এক্সটিংশন’ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও গবেষণায় হবে অগ্রগতি

Colossal-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ডিম কৃত্রিমভাবে তৈরি করা, জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা, এমনকি প্রাণীদের বিবর্তনের ইতিহাস বোঝা যাবে। এসবই ভবিষ্যতে হুমকির মুখে থাকা পাখি বা প্রাণী রক্ষায় সহায়ক হবে।

তবে ডিউক ইউনিভার্সিটির সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী স্টুয়ার্ট পিম বলেন, ‘এই প্রকল্প অনেকটা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের গল্পের মতো। এমন কিছু তৈরি হচ্ছে যা দেখতে যেমন বিলুপ্ত প্রজাতির মতো, কিন্তু প্রকৃতিতে তা কখনোই ছিল না।’

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×