ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রদের সামনে শিক্ষককে মারধর; অভিযুক্ত আটক

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:০২, ১৪ জুলাই ২০২৫

শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রদের সামনে শিক্ষককে মারধর; অভিযুক্ত আটক

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হালিমা নাসরীনকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৩ জুলাই) ক্লাস চলাকালে ওই শিক্ষকের ভাশুর মো. হুমায়ুন কবির তাঁকে মারধর করেন। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে ভাসুরকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত আটক ভাসুর মো. হুমায়ুন কবির উপজেলার উত্তর রোসাংগিরি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের আলম বাড়ির বাসিন্দা মৃত ওবাইদুল আলম চৌধুরীর ছেলে।


এর আগে, ক্লাস চলাকালে তিনি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে হালিমাকে তার স্বামীর কাছে ৫০ লাখ টাকা পাবেন দাবী করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারেন। ইট দিয়ে আঘাতের এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ফরিদুল আলম এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে এসব পাওনা টাকা সহসা না দিলে পর্যাক্রমে লাঞ্ছিত এবং বিদ্যালয় ছাড়ার হুমকি দিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ঘটনায় শিক্ষক হালিমা নাসরীন ভাসুর মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, দীর্ঘ একমাস ধরেই ওই শিক্ষকের ভাসুর মো. হুমায়ুন করিব তার ছোট ভাই মো. গোলাম মোস্তফার কাছে ৫০ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবী করেন। শিক্ষকের স্বামী গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে। এসব টাকা না দেওয়ায় তিনি তার স্ত্রী হালিমা নাসরীনকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে লাঞ্ছিত করতে থাকেন। উক্ত টাকা না দেওয়ার অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয় তিনি। এই সুযোগে বিভিন্ন সময় আশালীন কথাবার্তাও বলেন বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন।

রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ চতুর্থ শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক হালিমা নাসরীনকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। ওই শিক্ষককে সৈরাচারের দোসর বলেও শাসান ভাসুর। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে বিষয়টি স্বচক্ষে দেখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ফরিদুল আলম এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এরপর তাকে নানা হুমকি দিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) মো. হাসান মুরাদ চৌধুরীর নির্দেশে থানায় জানালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অভিযুক্ত ভাসুরকে আট্ক করে থানায় নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার। একজন শিক্ষক ক্লাসে অবাধে পাঠদান করতে গিয়ে যদি এভাবে আক্রান্ত হয় তাহলে-তো এই পেশা অনিরাপদ। পারিবারিক অনেক ঝামেলার বিষয় থাকতেই পারে, কিন্তু এসব বিদ্যালয়ে কেন? বিষয়টি আমরা উর্ধতনদের জানিয়েছি। তাদের পরামর্শে আমরা তাদের দিকে থাকিয়ে।’

ভূক্তভোগী শিক্ষক হালিমা নাসরীন জানান, ‘আমার স্বামীর কাছে ৫০ লাখ টাকা পাবে জানিয়ে ক্লাসে ঢুকে সব শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে হেনস্থা এবং মারধর করে। দোসর বলে আখ্যা দেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজেই আমাকে উদ্ধার করেছেন। এর চেয়ে মরেও যাওয়াও ভালো ছিল আমার। আমি এই চরম গৃণীত কর্মকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থি চাই।’

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষক মারধরের ঘটনায় অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি একান্তই তাদের পরিবারের। সেহেতু আক্রান্ত শিক্ষক বিষয়টি ভাসুরের পরিবারের জিম্মায় ফয়সালার পক্ষে মত দিচ্ছেন। যদিও এটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। আইনগত প্রক্রিয়ায় বিষয়টি নিস্পত্তি হবে বলে আমি আশাবাদি।’

আঁখি

×