
ছবি: সংগৃহীত
মানুষ সামাজিক প্রাণী। কিন্তু আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই একাকীত্বে ভোগেন—বিশেষ করে শহুরে জীবন, কর্মব্যস্ততা, পরিবার থেকে দূরে থাকা বা সম্পর্কভাঙনের মতো পরিস্থিতিতে। একাকীত্ব শুধু মনের ভার নয়, এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে নিয়মিত কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এই অনুভূতি থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
একাকীত্ব কেন ক্ষতিকর?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি একাকীত্ব ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, হৃদরোগ, অনিদ্রা এমনকি অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই একাকীত্বকে হালকা করে দেখা উচিত নয়।
একাকীত্ব কাটাতে যে অভ্যাসগুলো নিয়মিত করুন:
১. নিয়মিত বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
ফোনে বা ভিডিও কলে হলেও পরিচিতজনদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলার অভ্যাস করুন। সময় না থাকলেও সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে দেখা বা কথোপকথন একাকীত্ব কমাতে কার্যকর।
২. নিজের শখের জগতে ডুবে যান
চিত্রাঙ্কন, রান্না, গান, বই পড়া, লেখালেখি—আপনার যেটা ভালো লাগে, সেটাকেই সময় দিন। নিজের ভালোবাসার কাজে ব্যস্ত থাকা মানে মন খারাপের সুযোগ না দেওয়া।
৩. ফিজিক্যাল অ্যাকটিভ থাকুন
নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং, জিম, কিংবা যোগব্যায়াম মন ও শরীরকে চাঙা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে আনন্দদায়ক হরমোন (এন্ডোরফিন) নিঃসরণ হয়, যা মন ভালো রাখে।
৪. স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হন
অন্যকে সাহায্য করলে নিজেকে মূল্যবান মনে হয়। এলাকার কোনো সেবামূলক সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতে পারেন। এটা নতুন মানুষের সঙ্গে সংযোগও তৈরি করে।
৫. নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন
অভিনব কিছু শেখা যেমন—নতুন ভাষা, বাদ্যযন্ত্র বা অনলাইন কোর্স—মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। একাকীত্বে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটা খুব কার্যকর।
৬. ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন
একাকীত্বে অনেকে ঘুম ও খাবারের দিকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। অথচ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই একাকীত্ব কাটাতে সহায়ক। নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
৭. মন খুলে লিখুন বা কথা বলুন
জার্নাল লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অনুভূতি লিপিবদ্ধ করলে মনে হালকা লাগে। পাশাপাশি প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
একাকীত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে
প্রতিদিনের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে
মন খারাপ, ঘুমের সমস্যা বা আত্মহীনতার অনুভূতি বাড়তে থাকলে
একাকীত্ব প্রাকৃতিক, তবে এটি যেন আপনার জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করে। বরং নিজের যত্ন নিন, সামাজিক হোন, এবং পছন্দের কাজকে সময় দিন। মনে রাখুন, আপনিই আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন। একাকীত্ব নয়, সাহস ও স্বাস্থ্যের পথে হাঁটুন।
ফারুক