ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ইলিশ যেন ’স্বপ্নের খাদ্য’

আবুল হোসেন রাজু,  কুয়াকাটা, পটুয়াখালী 

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১১ জুলাই ২০২৫

ইলিশ যেন ’স্বপ্নের খাদ্য’

৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার ৯০০ টাকা। ৮০০ গ্রাম ইলিশের কেজি দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা আর এককেজি ওজনের ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করাও এখন অনেকের জন্য এখন বেমানান। সাধারণ ক্রেতারা শুধু দাম জিজ্ঞেসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। তবে সবারই কৌতুহল ইলিশের এত দাম কেন? বছরের সবচেয়ে চড়া চামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তাও চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না। 


ইলিশের দাম জানতে আমরা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পরা পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘাটে গিয়ে কথা বলি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে আশ্রয় নেয়া জেলেদের সাথে। চট্রগ্রামের বাশঁখালীর ট্রলার এফবি আল-আসফাক। গত ৪ জুলাই শুক্রবার ১৫ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা করে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে সমুদ্রে জাল ফেলে সামান্য কিছু মাছ পায়, এভাবে গত সোমবার অর্থাৎ সমুদ্রে নামার তিনদিনের মাথায় তিনবার সমুদ্রে জাল ফেলতে পারলে মাছের দেখা পায় মাত্র ২০০ পিসের যার ওজন হয় একশো ৬৩ কেজি। মাছের সাইজের উপর নির্ধারণ করে তিনটি দামে মাছগুলো বিক্রি করেন ট্রলারের মাঝি সালাহউদ্দিন (৪২)।


মাঝি জানায়, তিনবারের পরে আর সমুদ্র থাকা সম্ভব হয়নি, হটাৎ উত্তাল হয় সমুদ্র। জীবন রক্ষার্থে সবচেয়ে কাছের অবতরণ কেন্দ্র আলীপুরে চলে আসেন সোমবার রাতে। মঙ্গলবার মহিপুর আড়তে বিক্রি করেন চারমন মাছ যার দাম মাছের সাইজের উপর ভিত্তি করে ৩ প্রকারের।


মাঝির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এককেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছেন একলক্ষ ৩ হাজার টাকা মন। ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করেছেন ৮৬ হাজার টাকা মন আর ৬৫০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকা মন। এই মাঝির ভাষ্য, ইলিশের দাম বেশী হয়েছে তাতেই আমি সাড়ে ৭ লক্ষ টাকার বাজার নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করলাম। আমার লোকসান হলো ৪ লাখ টাকা, এখন মাছের দাম বেশী এটা যেমন ঠিক তেমনি দাম বেশী হওয়ার পরও আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে এটাও সত্যি। তিনি দাবি করেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকে এই সময়ে মাছ ধরতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, আর এই সময়টাতেই স্বাদের ইলিশ পাওয়া যায় পাশাপাশি দামটাও বেশী। তবে ইলিশ সংকট হওয়ায় দামটা চড়া, পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া গেলে দামটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।


ওই বন্দরে ট্রলার নোঙর করে আছে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা এফবি মারজান ট্রলার। ট্রলারেরে মাঝি রহমান খান জানায়, বর্তমানে ইলিশের দাম বেশী কারন গত ৩ মাস আমরা সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। মে-জুন গেল ৫৮ দিনের অবরোধ আর অবরোধের পরে একমাস আবহাওয়া খারাপ। তিন মাস যদি মাছ সংকট থাকে এরপরে অল্প মাছ বাজারে ওঠায় দামটা বেশী তবে মাছের পরিমাণটা বাড়লে দামটা কমে যাবে।


সরকার ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দিবে এমন আলোচনায় সরগরম মাছের আড়ৎগুলো। তবে এটিকে অনেক জেলে যুক্তিযুক্ত মনে না করলেও অনেকে বলছে মাছের দামের সাথে অনেক কিছুর দামের সমন্বয় তাই মাছের দাম সরকার নির্ধারিত করলে অনেককিছুর সংস্কার করতে হবে। তবে অনেক আড়তদাররা এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।


মহিপুর ঘাটের জেলে আনসার উদ্দিন জানায়, সরকার সিদ্ধান্ত ইলিশের দাম নির্ধারণ করবে। কিন্তু একজন জেলে কিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইলিশ সংগ্রহ করে তার খোঁজ নেননা। ইলিশের দাম বেশী তারপরও আমরা লোকসান গুনছি। জেলেদের কষ্ট কেউ জানতে চায় না। তাই বলবো, ইলিশের দাম নির্ধারণ করলে তৈল, বরফ সহ আমাদের সকল সরঞ্জামাদির দাম ও নির্ধারিত হতে হবে। যখন মালের দাম বাড়বে তখন ইলিশের দামও বৃদ্ধি করার পদ্ধতি থাকতে হবে। এটা আমাদের দাবি।


কুয়াকাটা পৌর বাজারে শুক্রবার যে দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে- কেজির উপরের ইলিশ বিক্রি হয়েছে এক লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামে ইলিশ ৯৫ থেকে ৯৮ হাজার টাকা,  ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ৭০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০ হাজার টাকা, জাটকা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

কুয়াকাটা মাছ বাজারের ঘরামি ফিসের পরিচালক মোঃ জয়নাল ঘরামি জানান, ইলিশের দাম কেন বেশী এই খবর আমরাও জানিনা। আমরা প্রতিদিন ঢাকা সহ যে সকল মোকামগুলোতে মাছ পাঠাই। সেখান থেকে তাদের বিক্রির উপরে নির্ভর করে আমাদেরকে যে দাম দেওয়া হয়। সেরকম দামে জেলেদের কাছ থেকে ক্রয় করি। আর কোনো কারন আমাদের জানা নেই, হয়তো মাছের পরিমানটা বেড়ে গেলে দামটা নাগালের মধ্যে চলে আসবে।


কলাপাড়া উপজেলা ফিশারিজ অফিসার আশিকুর রহমান জানান, লম্বা সময়ে জেলেরা সমুদ্র নামতে না পারার কারনে ইলিশের দামটা বৃদ্ধি তবে ইলিশের পরিমানটা বাড়লে দাম কমে আসবো। তারপরেও যাকে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরী করতে না পারে সেজন্য আমাদের তদারকি রয়েছে। 

আঁখি

×