ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

পরিবারে দারিদ্র্যতা, তবুও ডাক্তার হতে চায় জিম

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১১ জুলাই ২০২৫

পরিবারে দারিদ্র্যতা, তবুও ডাক্তার হতে চায় জিম

ছবি: সংগৃহীত

দরিদ্র পরিবার। দাদা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা। তিনিও দেড় বছর ধরে অসুস্থ। বাবার অসুস্থতা কিংবা পরিবারের দারিদ্র্য—কোনো বাধাই দমাতে পারেনি জিমকে। তার অদম্য প্রচেষ্টা, অধ্যবসায় আর শিক্ষকদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে সে। ভবিষ্যতে লেখাপড়া শেষ করে ডাক্তার হতে চায় জিম। করতে চায় দেশ ও মানুষের সেবা।

বলছি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছাঃ শাহ মনি আক্তার জিমের কথা। সে ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা জহুরুল হক ও রাশিদা বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে।

জহুরুল হক পেশায় একজন পান দোকানদার। ফুলবাড়ী বাজারে ছোট্ট একটি পানের দোকান আছে তার। সেই দোকানকে কেন্দ্র করেই চলত তাদের সংসার। কিন্তু দেড় বছর ধরে দোকানে আর বসতে পারছেন না তিনি। তার মেরুদণ্ডে জটিল রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসা করাতে নিজের জমানো যা কিছু ছিল, তা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবারের ভার। চারদিক থেকে কঠিন বাস্তবতা ঘিরে ধরেছে জহুরুল হককে।

বাবার অসুস্থতা ও পরিবারের দারিদ্র্যের মাঝেও নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছে জিম। সে জানায়, “আমি বাবা-মা ও স্যারদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি লেখাপড়া শেষ করে ডাক্তার হতে চাই। দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”

জহুরুল হক বলেন, “পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই আমার। ফুলবাড়ী বাজারে ছোট্ট পানের দোকান থেকে যা আয় হতো, তা দিয়েই সংসার চালাতাম। এরমধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে জটিল রোগ। প্রতিদিন ২০০ টাকার মতো ওষুধ খেতে হয়। অসুস্থতার কারণে দোকানটিও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে সংসারে অশান্তি লেগেই আছে। এদিকে জিম মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করেছে। জানেন, জিম ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু ডাক্তার হতে হলে তাকে আরও অনেক লেখাপড়া করাতে হবে। কিন্তু তার লেখাপড়ার খরচ জোগাবো কীভাবে? যদি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেতাম, তাহলে মেয়ের লেখাপড়া অন্তত চালু থাকত।”

জিমের মা রাশিদা বেগম বলেন, “একদিকে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা, অন্যদিকে মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। অভাবের কারণে স্বামীর চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেলে জিমের লেখাপড়া বন্ধ রাখা ছাড়া আর উপায় দেখছি না।”

জিমের প্রতিবেশীরা জানান, “জিমের রেজাল্ট দেখে সবাই খুব আনন্দিত। অভাবের সংসারে থেকেও মেয়েটা এত ভালো রেজাল্ট করবে—এটা আসলে অবাক হওয়ার মতো। কিন্তু আগামী দিনে সে লেখাপড়া করবে কীভাবে? এতদিন ওর বাবা খরচ জোগাতেন। এখন তিনিও অসুস্থ। মেয়েটার লেখাপড়ার জন্য কেউ এগিয়ে না এলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে।” এমন শঙ্কার কথাও জানান প্রতিবেশীরা।

ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী শাহ মনি আক্তার জিম এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অধ্যয়নকালে আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যতটুকু পেরেছি তাকে সহযোগিতা করেছি। তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।”

আসিফ

×