ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে নামছে, অন্যদিকে বাড়ছে: প্লাবিত ৩ উপজেলার ১১৪ গ্রাম

প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, ফুলগাজীতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ১১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৯, ১১ জুলাই ২০২৫

ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে নামছে, অন্যদিকে বাড়ছে: প্লাবিত ৩ উপজেলার ১১৪ গ্রাম

ছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে নামছে, অন্যদিকে বাড়ছে। ফেনীর মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ২১টি ভাঙা স্থানে পানি প্রবেশ অব্যাহত, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা গতকাল সন্ধ্যা থেকে প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

মোটবী ইউনিয়নের ইজ্জতপুর উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল রাতে ১৬টি পরিবারের ৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্লাবিত হয়েছে ৩টি উপজেলার ১১৪টি গ্রাম। ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও অবনতি হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার। এখনো পানিবন্দি শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে, ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তি ফুলগাজীর দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা। জানা গেছে, গতকাল তিনি শরীরে হালকা জ্বর নিয়ে মাছ ধরার জন্য (কাঁপাই নিয়ে) বেরিয়েছিলেন। এরপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। তার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে এলাকাবাসী সবাই খোঁজাখুঁজি করলে গতকাল মাগরিবের সময় যে স্থানে তিনি মাছ ধরতে গিয়েছিল, সেখানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিভিন্ন ইউনিযনের শতাধিক গ্রাম। এতে করে পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, ফসলি জমি, ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠে না উঠতেই এবার আবার বন্যার কবলে পড়ে তারা নিঃস্ব হয়েছেন, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন। চারদিকে থই থই পানি, অন্যের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলেও পোকামাকড় আর সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে দিন পার করছেন বানভাসীরা।

সামরিক-বেসামরিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বানভাসী মানুষ ত্রাণ সহায়তা চান না। তারা চান, প্রতিবছর বন্যার ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হোক। তারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান চান।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফেনীর বন্যাকবলিত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া (আংশিক), ফেনী সদর (আংশিক) ও দাগনভূঞা (আংশিক) উপজেলার ১১৪টি গ্রামের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সকল অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় দুর্যোগে সবচেয়ে নাজুক গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ ১৮ জনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ছবি: ফেনীতে বন্যায় সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতা

অপরদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় আটকে পড়া পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা ও রান্না করা খাবার এবং তাদের ত্রাণ সহায়তায় সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। গত ৭ জুলাই থেকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায় ৭টি স্থানে এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৩টি, মোট ১০টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়, পরে তা ২১টিতে পরিণত হয়। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ২১ স্থান ভেঙে ১১৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ওছমান হারুন মাহমুদ/রাকিব

×