
ছবি: সংগৃহীত
বরগুনার তালতলীতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ডিসি পয়েন্ট, শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, আশার চর, শুটকি পল্লী ও টেংরাগিরি ইকো পার্কে বেড়াতে আসা এসব পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এবার ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপন প্রয়োজন। এতে করে পর্যটকরা আরও নিশ্চিন্তে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। পাশাপাশি কোনো সমস্যা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে দ্রুত পুলিশি সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে।
বিশেষ করে ছুটির দিনে এসব পর্যটনস্থানে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে অনেক সময় পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া, পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা, ইভটিজিং কিংবা জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটার ঝুঁকিও থাকে। তাই স্থানীয়রা মনে করছেন, এই দাবিটি একেবারেই সময়োপযোগী ও যৌক্তিক।
ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে শুধু নিরাপত্তাই নয়, পর্যটনসেবার মানও বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন গতি আসবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তালতলী উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পর্যায়ে পর্যটন উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। এছাড়া পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তালতলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও পর্যটনসেবার মান উন্নয়নের জন্য ডিসি পয়েন্ট, শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত ও টেংরাগিরি ইকো পার্ক—এই তিনটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন আজ সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের দাবি—দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. মামুন তার পরিবারসহ তালতলীর ডিসি পয়েন্টে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব, তবে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার। যদি ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প থাকত, তাহলে আমরা আরও নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে পারতাম।’
চাঁদপুর থেকে আসা আরেক পর্যটক সাদিয়া মল্লিক বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে নিরাপত্তা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নারীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এ অঞ্চলে পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।’ একই কথা বলেন খুলনা থেকে আগত কলেজছাত্র রিয়াজুল করিমও। তার ভাষায়, ‘ডিসি পয়েন্ট থেকে টেংরাগিরি ইকো পার্ক পর্যন্ত যাতায়াতে পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা এবং পুলিশি সহায়তা থাকলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও ভালো হতো।’
ডিসি পয়েন্টের পাশের দোকানদার মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘পর্যটক আসলেই আমাদের দোকানে বিক্রি বাড়ে। কিন্তু মাঝেমধ্যে পর্যটকরা ছোটখাট সমস্যায় পড়েন, তখন সাহায্য করতে পারলেও সব সময় পারি না। যদি ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প থাকত, তাহলে পর্যটকরাও নিরাপদ থাকতেন, আমরাও নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারতাম।’
পর্যটন নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক আরিফ রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক আসে। অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলে তাদের দ্রুত সাহায্য করা যেত। নিরাপত্তা পেলে সবাই বারবার আসতে আগ্রহী হবেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ‘শুভসন্ধ্যার এই দিকটা সিসি ক্যামেরার আওয়াত আনা হয়েছে। ডিসি পয়েন্টেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। পর্যটকদের আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পর্যটন ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে আমাদের অগ্রাধিকারের জন্য ডিসি পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে আমরা লিখবো।’
বরগুনা পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। তবে একটি পর্যটনকেন্দ্রিক এলাকা হিসেবে তালতলীতে আলাদা ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশের জনবল সংকটের কারণে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওখানে পরবর্তীতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হবে।’
রাকিব