
ঝড়-ঝঞ্জা, সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়াল উত্তাল সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ শিকার করতে অন্তত অর্ধশত ট্রলারের পাঁচ শতাধিক জেলে ছুটেছেন। জাল ফেলতে পারবে কি না তা নিশ্চিত নয়; তারপরও সাগরে যেতে দেখা গেছে এসব জেলেদের। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে এসব জেলেরা মহিপুর-আলীপুর বন্দর থেকে সাগরপথে যাত্রা করেন। লটারির মতো যদি লাইগ্যা যায়। জাল ফেলতে পারলে মাছ নিশ্চিত পাবেন এমন দৃঢ়তা নিয়েই এসব জেলে সাগরমুখি যাত্রা করেছেন। মাছ পেলে পেছনের লোকসান কাটানোর আশায় জীবন-মৃত্যুর পরোয়া না করেই জেলে ছুটেছেন সাগরবক্ষে। একেকটি ট্রলার ১০-১২/১৩-১৪ ঘন্টা ট্রলার চালানোর পরেই জাল ফেলতে পারবেন। তারপরে মাছ পেলে ফিরবেন কিনারে। সংসার জীবন, স্ত্রী-সন্তানের চিন্তা না করেই এসব জেলে গেছেন সাগরে। নিজের জীবন তো বরাবরই তুচ্ছ এদের কাছে। একেকটি বড় সাইজের চিটাগংয়ের বাশখালী এলাকার মালিকানাধীন এসব অধিকাংশ বোট।
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা নিশ্চিত করে জানান, ওখানকার একই মালিকের ছয়টি বোট সকাল বেলা ভয়াল উত্তাল থাকা সাগরে মাছের আশায় ছুটে গেছে। এফবি হাজী মোঃ আনোয়ার বোটের মাঝি মোঃ ফোরকান জানালেন, তিনি ২৪ জন জেলে নিয়ে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে দুপুরে রওয়ানা দিলেন। জানালেন, একক ট্রিপে একেকজনের বেতন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। তাই সংসারের প্রয়োজনের আবার সাগরে নামলেন।
এসব জেলেরা প্রচন্ড দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, সাগরে মাছ আছে। মাছ পাবেন, যদি জাল ফেলতে পারেন। আবহাওয়া ভালো হলে মাছ মিলবে। এমন প্রত্যাশা নিয়েই অন্তত অর্ধশত বড় সাইজের ট্রলার সাগরে নেমেছে এমন খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবরোধ শেষ হওয়ার একমাস পূর্ণ হবে আগামিকাল ১১ জুলাই, শুক্রবার। লোকসানের বোঝায় মালিকসহ নিজেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বলে অধিকাংশ জেলেরা জানান। এরই মধ্যে এখন মাছ পেলে অন্তত এক লাখ টাকা মণ দরে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। সোনার দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এই লোভেও অনেক জেলেরা সাগরে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ছুটে গেছেন।
কুয়াকাটা সৈকতের মাঝিবাড়ি এলাকায় দাঁড়িয়ে অনেক ট্রলারকে আন্ধারমানিক মোহনা থেকে বের হয়ে সাগরপানে ছুটতে দেখা গেছে। প্রচন্ড ঢেউ উপেক্ষা করে এসব ট্রলার নিয়ে জেলেরা ছুটছেন সাগর অভিমুখে ইলিশের আশায়। তবে ঘাটে ভেড়ানো এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে আল-আমিন জানালেন, জীবনের এমন চরম ঝুঁকি নিয়ে সাগরে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে; হয়তো আর নাও ফিরে আসতে পারা। এটাই হয়তো শেষ যাত্রা হইতে পারে। তারপরও জীবনকে যেন জীবনের প্রয়োজনে বিলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নিয়েই এসব জেলের দুঃসাহসিক অভিযান-এই উত্তাল সাগরে ইলিশ শিকারের যাত্রা চলছেই।
রাজু