ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, মৎস্য ঘের, ফসলের মাঠ:তালার নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে

এম এ মান্নান,তালা,সাতক্ষীরা:

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৫, ১০ জুলাই ২০২৫

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, মৎস্য ঘের, ফসলের মাঠ:তালার নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে

উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গত এক সপ্তাহের বেশি ধরে ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে এলাকার বিল, খাল পানিতে ডুবে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি উঠেছে বসতবাড়ি, মৎস্য ঘের ও ফসলের জমিতে। তবে সপ্তাহখানেক একটানা বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। সূর্যের দেখা না মিললেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হলেও কাজ মেলেনি অনেকের।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে ভোর থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের কাজে বের হন। দোকানপাটসহ হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে মানুষের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। অনেকেই দোকান খুলে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকের আবার দোকানের মধ্যে উঠেছে পানি। এছাড়া উপজেলার সবজি ক্ষেতগুলো, আমন ধানের বীজতলা ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার আটারই গ্রামের ভ্যানচালক সুজিত দাস বলেন, “গত এক সপ্তাহ বসার পর গতকাল ভোরে বৃষ্টিতে বের হয়েছি, ভাড়া হয়নি। টুকটাক চালিয়ে ৮০ টাকা আয় হয়েছে।”
যুগিপুকুরিয়া গ্রামের বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, “আমি সকালে মাছের কাটায় মাছ পাইকারি কিনতে গিয়ে দেখি, বৃষ্টির কারণে মাছ তেমন আসেনি।”


আলাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আজহারুল ইসলাম জানান, “বৃষ্টির দিনে কেউ ভ্যানে উঠতে চায় না। আমাদের ৭ জনের সংসারে আমি একমাত্র উপার্জনকারী। এক সপ্তাহ বসে থাকার পর গতকাল বের হয়েছিলাম ভ্যান নিয়ে, কোনো রকমে ৯০ টাকা ইনকাম করে দেড় কেজি চাল নিয়ে বাড়িতে গিয়েছি রাতে।”
দিনমজুর মো. আবুল কালাম বলেন, “সারাদিন বৃষ্টির কারণে কাজ হয়নি। কাজ না করলে আমাদের দিন চলে না।”

জাতপুর বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী তপন দাস জানান, “গত ১০ দিন ধরে বৃষ্টিতে এসে দোকান খুললেও কাস্টমারের দেখা মিলছে না। দুই-একটা কাজ ছাড়া আর কোনো কাস্টমার পাইনি।”
মুদি ব্যবসায়ী মিঠুন শীল জানান, “কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমার দোকানের ভিতর পানি উঠে গিয়েছিল। এজন্য বেচাকেনা করতে পারিনি।”
দর্জি দোকানদার আসাদ জানান, “কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাজারের গলিতে পানি জমে থাকায় কোনো কাস্টমার দোকানে যায়নি। সারাদিন বৃষ্টি, তাই কষ্টে দিন পার করছি।”

অবিরাম বৃষ্টির কারণে অনেক স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন জানান, “টানা বৃষ্টিতে গতকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর সবজি, ২০ হেক্টর আউশ ধান ও ১০ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা সহ পাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

আফরোজা

×