
চুয়াত্তর বছর বয়সী রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। মহিলা দলের এক নেত্রী তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন। ওই নেত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) অভিযোগটি গৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগপত্রের অনুলিপি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বিএনপি নেতার অনৈতিক প্রস্তাব ও যৌন হয়রানির একাধিক অডিও ক্লিপও হাইকমান্ডে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী জেলা মহিলা দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তার বাড়ি পবা উপজেলায়। তিনি অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে বিশ্বনাথ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। এ ঘটনায় রাজশাহী বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে মহিলা দল নেত্রী উল্লেখ করেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বিগত চার মাস যাবৎ তাকে নানাভাবে যৌন হয়রানি, অনৈতিক প্রস্তাব ও বৈরি আচরণ করে আসছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাংগঠনিক কারণে বিশ্বনাথ বাবুর সাথে আমার পরিচয়। বিশ্বনাথ বাবুর বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। এই বয়সেও তিনি আমাকে নানাভাবে উত্যক্ত ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বিএনপির মতো একটি জননন্দিত ও জনপ্রিয় গণমানুষের দলের নেতার জন্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তিনি দলের পদকে ব্যবহার করে অবৈধ টাকা কামিয়ে টাকার জোরে এই বয়সে তার ভীমরতি ধরেছে বলে আমার আশঙ্কা।
তিনি লেখেন, ‘সদয় সহানুভূতি ও ন্যায়বিচারের প্রতি শতভাগ আস্থা রেখে প্রতিকারের আশায় জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, বিশ্বনাথ সরকারের সঙ্গে শুধু সাংগঠনিক কারণে ঘনিষ্ঠতা হয়। আমি গুরুতর এ্যানিমিয়া ও হৃদরোগে দীর্ঘদিন ভুগছি। এ কারণে ভারতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু হলে ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পেতে বিশ্বনাথ বাবুর শরণাপন্ন হই। আমি ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পেতে বিশ্বনাথ বাবুর সাহায্য কামনা করি ও তার সাগরপাড়ার বাসভবনে সাক্ষাৎ করি। কিন্তু তিনি আমার ভিসার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। তিনি আমার কাজ না করলেও আমাকে ফোন করে সন্ধ্যার পর বাসায় ডাকেন।
তিনি আরও লেখেন, আমি ভিসার প্রসঙ্গ বলতে চাইলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। এভাবে আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। তারপর বিশ্বনাথ বাবু আমাকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তিনি আমাকে বলেন, “তোমাকে আমি সাত বছর ধরে নজরে রেখেছি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এমনকি তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে ঘুরতে যাবার প্রস্তাব দিয়ে চিকিৎসার সকল খরচ বহনের লোভ দেখান। আমাকে নিয়ে রাজশাহীর হোটেলে সময় কাটানোর অনৈতিক প্রস্তাব দেন। আমি তাকে বিনীতভাবে বলি, আপনি আমার পিতার বয়সী মানুষ এবং ভিন্ন ধর্মের। তার এই প্রস্তাব আমি সরাসরি প্রত্যাখান করি এবং আমাকে আর ফোন না করার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু বারণ না শুনে ফোনে আমাকে উত্যক্ত করতেই থাকেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বনাথ বাবু প্রায় গভীর রাতে আমাকে ফোন করেন। ফোনে অশ্লীল কথাবার্তা বিয়ের প্রস্তাবসহ অনৈতিক কথা বলতে থাকেন। আমি বিশ্বনাথ বাবুর কথোপকথনের ফোনকল রেকর্ড করে তা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল, জেলা মহিলা দলনেত্রী অ্যাডভোকেট মিতালীকে শোনাই ও প্রতিকার পেতে অভিযোগ করি। কিন্তু বিশ্বনাথ বাবুর কথোপকথনের অডিও শোনার পরও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যাতে আমি দলের হাইকমাণ্ডে কোন অভিযোগ না করি। এমনকি বিশ্বনাথ বাবু আমার কাছে তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি এখন দলের কোন কোন ব্যক্তির হুমকির মুখে পড়ে ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। নিরাপত্তার অভাবে দলীয় কর্মসূচিতেও যেতে পারছি না। অভিযোগে তিনি বিশ্বনাথ সরকারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, আমার কাছে কেউ কোন কমপ্লেইন দেয়নি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না। অভিযুক্ত জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, আমার বর্তমান বয়স ৭৩-৭৪। যারা দল করে, তারা আমার মেয়ের মতো। আমি সেভাবেই দেখি। দলীয় কারণেই সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করতে হয়েছে। কিন্তু অভিযোগের মতো কোন বিষয় নেই। তার এ রকম অভিযোগ আছে আমি সেটাও জানি না।
রিফাত