ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

নড়াইলে বিনামূল্যে মিলবে মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের সরঞ্জাম

মো.মিলটন শেখ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নড়াইল সদর উপজেলা, নড়াইল

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৯ জুলাই ২০২৫

নড়াইলে বিনামূল্যে মিলবে মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের সরঞ্জাম

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

মায়ের দোয়া স্টোর বা কোনো ভাই ভাই স্টোরের চাল,ডাল,আটা,তেল,  চিনি  বা কেনো খাদ্য পন্যের দোকান নয়। যদিও দোকানের নামের শেষাংশে  লেখা স্টোর বা পন্যে সংরক্ষণের স্থান।  বেচে থাকার জন্য দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের খাদ্যদ্রব্যের দোকান থাকলেও মরে যাওয়ার পর দাফন কাফনে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় কাপড়  বা অন্যান্য পন্যের জন্য আলাদা দোকান ঘরের দেখা মেলেনা।  ভিন্ন চিন্তাধারার এক দোকানের দেখা মিলেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের এড়েন্দা বাস স্টান্ডে। দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে শেষ বিদায় স্টোর।

গত ৬ই জুলাই (রবিবার) বিকালে এ দোকানঘরের উদ্বোধন করেন ছাত্ররা। যেখানে মানুষের মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন কাজের যাবতীয় পন্য পাওয়া যায়।  এমন ভিন্ন চিন্তাধারার পদক্ষেপ নিয়েছেন  কাশীপুর অম্বিকা চরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০১৩ এস এসসি ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা। যেখানে বিনামূল্যে দেওয়া হবে কাফনের কাপড়, আতর, জানাযার চাদর এবং দাফনের প্রাথমিক সরঞ্জামাদি।  দোকানে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্যাকেটে  রাখা হয়েছে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের কাফনের কাপড়। শুধু জানাযার সরঞ্জমই নয়  মৃত্যের পর  অন্যান্য সুবিধার জন্যও সহোযোগিতা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

যেহেতু মৃত্যুর কোনো  নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ নেই তাই ২৪ ঘন্টাই খোলা রাখার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এই দোকানের। 

২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাওনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সমাজের অনেক অসহায় মানুষ আছে যাদের পরিবারের কেউ মারা গেলে তাদের কাফনের কাপড় কিনতেও  পরিবারের অর্থের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে হিমসিম খেতে হয়। আবার বাজারে অনেক সময় মৃত্যুর সরঞ্জম কিনতে গেলে সব দোকানে পাওয়া যায়না যার কারনে  হয়রানি হতে হয়। অনেক সময়  বাজারে রাতবেরাত দোকান খোলা না থাকার কারনেও হয়রানি হতে হয়। তাই  কোনো ব্যক্তি পরিচয় বা আর্থিক অস্বচ্ছলতা যেনো মৃত্যুকে অসম্মানিত না করে মৃত্যুর পর সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে কবরে যেতে পারে সেই দায়িত্ববোধ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাজারে হঠাৎ এমন ভিন্ন দোকানঘরের সাইনবোর্ড দেখে সাধারনের মনে জেগেছে অন্যরকম অনুভুতি।

এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা এই ধরনের দোকানঘর  জীবনে প্রথম দেখলাম যারা এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তাদের নিয়ে আমরা এলাকবাসী গর্ববোধ করছি।

এদিকে  শিক্ষার্থীদের এমন মানবিক উদ্যোগ দেখে দোকান ঘরের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন  নিজেও এর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলেও জানালেন। সেই সাথে দোকান ঘর ভাড়ার জন্য নিবেননা অগ্রীম কোনো টাকা বা ভবিষ্যতেও নিবেননা মাসিক কোনো দোকান ভাড়া।

মানবতা সেই আলো, যা অন্ধকার পৃথিবীকেও আলোকিত করতে পারে মানবতা এমন একটি ফুল, যা যত্নে রোপণ করলে সমাজে শান্তি ফুটে ওঠে শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের সুভাস ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে। শুভকামনা রইলো শেষ বিদায় স্টোরের জন্য।

ফারুক

×