ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন হাই স্কুলে ২১ বছর ধরে বেতন-ভাতা বঞ্চনার অভিযোগ দুই শিক্ষিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২১:২৫, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:২৬, ৯ জুলাই ২০২৫

ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন হাই স্কুলে ২১ বছর ধরে বেতন-ভাতা বঞ্চনার অভিযোগ দুই শিক্ষিকার

ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সরকারি বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দুই সহকারী শিক্ষিকা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে বছরের পর বছর তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য না পেয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বুধবার দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষিকা রুকসানা আক্তার (জীববিজ্ঞান) ও আফরোজা পারভীন (কম্পিউটার শিক্ষা) প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করেন।

লিখিত বক্তব্যে তাঁরা জানান, ২০০৩ সালের ৭ ডিসেম্বর পুলিশ লাইন হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদানের পর থেকে তাঁরা পূর্ণ সময়ে পাঠদান করে আসলেও আজ পর্যন্ত কোনো মাসেই সরকারি বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাননি। একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও মেলেনি কোনো সাড়া।

দুই শিক্ষিকার অভিযোগ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সরকারি অনুদান ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করার কথা থাকলেও তাঁরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছেন। অথচ ২০০২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শর্তসাপেক্ষ এমপিও অনুমোদনের নথিতে ছিল সকল শিক্ষকের বেতন সরকারি অংশ থেকে দেওয়ার বিষয়টি।

তাঁরা আরও দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালার একাধিক ধারা লঙ্ঘন করেছে। ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এক বিশেষ সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত সেই সভার কোনো সিদ্ধান্ত তাঁদের জানানো হয়নি।

শিক্ষিকারা বলেন, “আমরা শুধু নারী বলেই কি আমাদের প্রতি এত অবহেলা? আমরা দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছি, ক্লাস নিয়েছি, পরীক্ষা নিয়েছি। অথচ প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন দায়িত্ব থেকেও আমাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এটা কেমন বিচার?”

তাঁরা জানান, বাধ্য হয়ে তাঁরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেন এবং এর জন্য আট মাস পর তাঁদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ২৬ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করলেও ২৯ জুন হঠাৎ প্রধান শিক্ষক তাঁদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন এবং ডিউটি রেজিস্টার থেকে তাঁদের নাম বাদ দেন। বিষয়টি লিখিতভাবে সভাপতি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি।

তাঁদের দাবি, দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ ও চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদন এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, “আমরাও চাই ওই দুই শিক্ষিকা তাঁদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা যেন পান। তবে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তাই এ বিষয়ে তেমন কিছু করার ক্ষমতা নেই।”

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ওই দুই শিক্ষিকা যে বিষয়ে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মিমিয়া

×