ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

গেজেট বাতিলের দাবিতে রাজবাড়ীতে আইনজীবীদের মানববন্ধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৯:০১, ৯ জুলাই ২০২৫

গেজেট বাতিলের দাবিতে রাজবাড়ীতে আইনজীবীদের মানববন্ধন

চেক ডিজঅনার, যৌতুক নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা আদালতে দায়েরের আগে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আপসের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত গেজেট বাতিলের দাবিতে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে আইনজীবীরা।

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালত চত্বরেই সিনিয়র ও তরুণ আইনজীবীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ও পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ১ জুলাই প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, চেক ডিজঅনার, যৌতুক নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পারিবারিক আদালত আইন ও সম্পত্তি বণ্টনসংক্রান্ত মামলাগুলো সরাসরি আদালতে দায়ের করা যাবে না। প্রথমে স্থানীয় লিগ্যাল এইড কমিটি আপসের চেষ্টা করবে; আপস ব্যর্থ হলে তবেই আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এই গেজেট বিচারপ্রার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে। বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আপসের বাধ্যবাধকতা ভুক্তভোগীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এতে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি ও সামাজিক চাপ আরও বেড়ে যাবে।

মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট কেএ বারী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সফিক বলেন, “মামলা দায়েরের অধিকার একটি মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সেটিকে ‘আপস ফিল্টারে’ ফেলে আদালতে ঢোকার পথ রুদ্ধ করা সংবিধান বিরোধী। লিগ্যাল এইড একটি সহায়ক সংস্থা, বিচার ব্যবস্থার ফটকদ্বার নয়।” তাঁরা আরও বলেন, "গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো উপেক্ষা করে আপস বাধ্যতামূলক করা মানে দুর্বল মানুষকে আরও দুর্বল করা। ফলে নারী, শিশু, এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে।"

রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু বলেন, “চেক ডিজঅনার মামলায় অভিযুক্তরা অনেক সময় সশস্ত্র বা প্রভাবশালী হয়ে থাকেন। আপসের বাধ্যবাধকতা থাকলে তারা প্রতিকার পাওয়ার আগেই প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে পারে।”

সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার সোম বলেন, “সরকার এমন একটি গেজেট দিয়ে বিচার ব্যবস্থার মেরুদণ্ডে আঘাত করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আপস বাধ্যতামূলক করা মানে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের পথ কঠিন করে দেওয়া।”

রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এই গেজেট শুধু আইন পেশাকেই দুর্বল করবে না, বরং বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তিতে ফেলবে। আমরা চাই, সরকার অবিলম্বে এই গেজেট বাতিল করুক। তা না হলে সারাদেশব্যাপী আইনজীবীরা কঠোর আন্দোলনে নামবে।”

রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, নতুন এ বিধান কার্যকর হলে মানুষ বুঝতেই পারবে না, কোথায় যেতে হবে, কীভাবে মামলা করতে হবে। মামলার সময় দীর্ঘ হবে, মামলা না নেওয়ার অজুহাত বাড়বে এবং প্রতিকার পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

 

রিফাত

আরো পড়ুন  

×