
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
ফরিদপুর থেকে দেশিও প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কারণে।এছাড়া পানির অভাবে দেশিও মাছের সংকট দেখা দিয়েছে বলে অনেকে আবার মনে কারণে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় দেশি জাতের অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে হাইব্রিড মাছের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে হাইব্রিড প্রজাতির মাছের সরবরাহ ও বিক্রি বেড়েই চলেছে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত।কিন্তু সময়ের বিবর্তনের কাজ হারিয়ে গেছে। আগের মত দেশীয় মাছ দেখা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,দেশীয় মাছ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার জন্য মূলত অনেকগুলো কারণই দায়ী। এরমধ্যে মধ্যে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খালবিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা- পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই ১৪টি কারণে ৫০ টির বেশি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৎস্য কাজে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,মাছ বৃদ্ধর জন্য পুকুরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, মা মাছ নিধন, অভয়াশ্রমের অভাব ও সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন এ জেলায় দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ প্রায় নির্বিকার।
স্থানীয়রা জানান, একসময় জেলাতে পুটি, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, টাকি, গুঁচি, শোউল, গজার, বোয়াল, বাইম, পুঁটি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। এখন এসব প্রজাতির মাছ পাওয়াই দুষ্কর। বিলুপ্তপ্রায় এই মাছগুলো একসময় চিরচেনা হলেও এখন তা এলাকাবাসীর কাছে খুবই অপরিচিত। জেলার সচেতন মহলের শঙ্কা, এসব মাছকে সচেতনতার মাধ্যমে ধরে রাখতে না পারলে হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতো মনে হবে। আর এসব মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে জনসাধারণ।
এছাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মাঝে মধ্যে বাজারে কিছু আমদানি হলেও তার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে ব্যাপক হারে তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, পাঙ্গাশ, থাই কৈ, আফ্রিকান মাগুর, পিরানহা, গ্রাসকার্প, সিলভারকাপ সহ আরও বেশ কিছু প্রজাতির বিদেশি মাছের চাষ হতে দেখা যাচ্ছে। হাইব্রিড মাছ চাষে অধিক লাভবান হওয়ার কারণে মাছচাষিরা ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদেশি প্রজাতির মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকে।
মাছ বিক্রেতা শহিন বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে হাট বাজারগুলেতে থাই সরপুটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, রুই-কাতল, মৃগেল, সিলভার কাপ মাছ বিক্রি হচ্ছে। আবার পার্শ্ববর্তী ভারত ও বার্মা থেকেও মাছ আমদানি করা হচ্ছে আমাদের দেশে। কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ। এসব মাছ আবার তরতাজা রাখতে ব্যবহার করা ফরমালিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এবং খেতে সু-সাদু নয়।
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কালিপদ চক্রবর্তী বলেন, ছোট সময় নদী-নালায় মাছ বোয়াল, শৌল, বাইন আরও কত কি মাছ ধরতাম। কিন্তু ওই সব মাছ আর পাওয়া যায়না।
তিনি আরও বলেন , দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় , নদী -খালবিল জলাশয় এবং পুকুর ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন স্থান সংকুচিত হচ্ছে। প্রজনন স্থানে মা মাছের অভয়ারণ্য করে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে, বর্ষাকালে উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা ছাড়তে হবে। তাহলে হয়তো আগের মত ছোট জাতের বাজার সয়লাব করবে।
ফারুক