ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি  ঘোষণা করেন  নাহিদ ইসলাম

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৮ জুলাই ২০২৫

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি  ঘোষণা করেন  নাহিদ ইসলাম

.

কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রথম ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি স্কুল-কলেজসহ সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে কঠোর কর্মসূচির দিকে এগোতে থাকে আন্দোলনকারীরা। চব্বিশের ৯ জুলাই কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামনে আগের দিনগুলোর মতোই আবারও জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এদিন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আগামী দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেডের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল (১০ জুলাই) সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এর আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী সড়ক অবরোধের আহ্বান জানান তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ৫ জুন থেকে আন্দোলনে আছি। এই আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে করেনি। হাইকোর্টের রায়ের কারণে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অনেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বলছেন। আমরাও চাই না সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি তৈরি হোক। কিন্তু এখনো নির্বাহী বিভাগ আমাদের কোনো আলোচনা বা আশ্বাস দেয়নি। সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটা বৈষম্য নিরসনের কথা বলছি আমরা। কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ৬-৮ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, রাস্তা অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিল কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

টানা আন্দোলনে কোনো সুরাহ না পেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে আন্দোলনের প্রস্তুতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ মেয়াদের এই আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন তারা। এদিন দ্বিতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচির পর রাতে দাবি আদায়ে সরকারকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আগামী তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে গণসংযোগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান তারা।
২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ( ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত। এ রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ওইদিনই আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আদালতের এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে শুনানির জন্য ৪ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করে আদালত। দাবি মানতে সরকারকে ১০-৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিকে তোয়াক্কা না করে আন্দোলন থামাতে নানাভাবে বলপ্রয়োগ করতে থাকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এদিকে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে ঢাবির গ্রন্থাগারের সামনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা অবস্থান নেন, সঙ্গে যোগ দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা; মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই ইত্যাদি বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তারপর পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে এসে দাবি আদায়ে কোটা বাতিলসহ আরও কয়েকটি দাবি আদায়ে টানা তিন দিনের কর্মসূচি দেন তারা। ওই দিনই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। 
দাবিগুলো হচ্ছে- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া ও দুর্নীতিমুক্ত-নিরপেক্ষ-মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র  নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। 
 

×