ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

আরবি হরফ উৎকীর্ণ ইট

যশোরে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে দুর্লভ ঐতিহাসিক নিদর্শনের সন্ধান

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ০০:০১, ৭ মে ২০২৫

যশোরে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে দুর্লভ ঐতিহাসিক নিদর্শনের সন্ধান

যশোর সদরের ফুলবাড়ী হজরত সিদ্দীন আউলিয়ার মাজারে আরবি উৎকীর্ণ লেখা ইট

যশোর জেলায় চলমান প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে উদ্ধার করা হয়েছে আরবি হরফে লেখা কয়েকটি দুর্লভ ইট উৎকীর্ণ লিপি যা প্রত্নসাক্ষ্যসহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য উপাদান। এসব প্রামাণ্য উপাদান গবেষণা করে উদ্ধার করা যাবে যশোর অঞ্চলের ইতিহাস পুনর্গঠনের অজানা তথ্যসহ মহামূল্যবান উপাদান। এসব ইট সুলতানি আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয় খনন কাজ শুরু করে যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের সালতা পীরের ঢিবি বা বুড়ি মা’র থান-এ। এর পাশে ফুলবাড়ি বাজার। বাজারে রয়েছে বড় দীঘি। পাশেই রয়েছে হজরত সিদ্দীন আউলিয়া (র) মাজার। এই মাজারের গায়ে উৎকীর্ণ ছিল আরবি হরফে লেখা অনেক ইট। এর মধ্যে ৪টি ইট সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিগুলো বিভিন্ন সময় হারিয়ে গেছে।

সেগুলো সংগ্রহ করা যায়নি। ইটের লেখা পাঠোদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। পাঠোদ্ধার সম্ভব হলে পাওয়া যাবে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র। যেগুলো যশোরে মুসলিম বসতিগড়ে ওঠার সপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য উপাদান হতে পারে। 
২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় স্থাবর পুরাকীর্তি অনুসন্ধান এবং মাঠগবেষণা কর্মের অংশ হিসেবে যশোর জেলার ৭টি উপজেলায় প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় যশোর সদর, মণিরামপুর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও  শার্শাসহ জেলার মোট ৭টি  উপজেলায় পর্যায়ক্রমে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ঐতিহাসিক শেরশাহ সড়ক (গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড) অনুসন্ধানের মাধ্যমে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দলটি আনুষ্ঠানিক জরিপ কার্যক্রম শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে বাঘারপাড়া, অভয়নগর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও  শার্শাসহ জেলার মোট পাঁচটি উপজেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিনের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত জরিপ কার্যক্রমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস। ৮ সদস্যবিশিষ্ট প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও  অনুসন্ধানকারী দলটি যশোর জেলার বাঘারপাড়া, অভয়নগর, শার্শা  চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলায়  মাঠগবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রায় দুই শতাধিক প্রাচীন স্থাপনা/প্রত্নস্থল অনুসন্ধান, নথিভুক্তিকরণ, সংরক্ষণ যোগ্যতা যাচাই, ঐতিহাসিক, প্রতœতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব নিরূপণ করে।

১০টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোকে প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।  এর মধ্যে ২১টি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা/ নিদর্শনকে সংরক্ষণযোগ্য পুরাকীর্তি হিসেবে চিহ্নিত করে জরিপের প্রাথমিক তালিকায়  অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 
চিহ্নিত প্রতœস্থাপনা/পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, মঠ ও সমাধি, আবাসিক স্থাপনা, প্রাচীন সেতু, নীলকুঠি, জমিদার বাড়ি, গড় ও পরিখা, প্রতœতাত্ত্বিক ঢিবি উল্লেখযোগ্য। 
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনার বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, চলমান প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে আদি ঐতিহাসিক, আদি মধ্যযুগ, মুঘল ও ঔপনিবেশিক আমলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতœবস্তু, নিদর্শন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।
জরিপ ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন, জরিপ পরবর্তী গবেষণার মাধ্যমে যশোরে প্রাপ্ত প্রতœসাক্ষ্য থেকে এই অঞ্চলের ইতিহাস পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
চলমান মাঠ প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার  জরিপ ও অনুসন্ধানকারী দলটি  উপজেলা ওয়ারী সংরক্ষণ যোগ্য স্থাবর ও অস্থাবর পুরাকীর্তির প্রাথমিক তালিকা প্রকাশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাঠগবেষণা কর্মের অংশ হিসেবে ২০১৪ সাল থেকেই জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর থেকে যশোর জেলার সদর ও মণিরামপুর উপজেলায় প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

×