ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতারণার অভিযোগে নারী চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ

সাগর হোসেন, কুষ্টিয়া।।

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৮, ৫ মে ২০২৫

প্রতারণার অভিযোগে নারী চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ

কুষ্টিয়ায় চিকিৎসক শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি, ঘর, জমি ও ভাতা দেওয়ার প্রলোভনে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে টাকা ফেরত না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা সোমবার (৫ মে) দুপুরে শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত চিকিৎসক এমবিবিএস ডিগ্রিধারী শারমিন সুলতানা কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতেন। রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানার হেফাজতে রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।

ভুক্তভোগীদের একজন, মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার সুমি খাতুন বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়ায় শারমিন সুলতানার কাছে চিকিৎসা নিতে আসি। পরিচয়ের সুবাদে ৭-৮ মাস আগে তিনি আমাদের সরকারি চাকরি, ঘর ও ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেন। আমি ও আমার আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় ৩০-৪০ জন মিলে তাকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন তিনি আমাদের কিছুই দেননি। তাই আজ কুষ্টিয়ায় এসে তার শাস্তি ও টাকা ফেরতের দাবিতে প্রতিবাদ করেছি।”

আরেক ভুক্তভোগী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এলাকার সালমা খাতুন বলেন, “তিনি সরকারি চাকরি ও জমি দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আমার জামাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের এলাকার আরও ৫০-৬০ জন থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। আমরা সবাই তার শাস্তি চাই।”

দর্শনা এলাকার খাদিজা খাতুন জানান, “আমার কাছ থেকে জমি দেওয়ার নামে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন টাকা ফেরত দেন না, জমিও দেন না। এমন আরও অনেকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।”

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জাহিরা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার কেউ নেই। আমার দুইটা ছাগল ছিল, সেগুলো বিক্রি করে তাকে ৬০ হাজার টাকা দিই। ঘর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখন কিছুই দেননি। আমি গরিব মানুষ, আমার টাকা ফেরত চাই।”

অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক শারমিন সুলতানা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। বরং আজ যখন আমি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই, তখন তারা আমাকে মারধর করে এবং গহনা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।”

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, “সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নুসরাত

×