
বহরপুর এলাকায় সেচের অভাবে বিশাল পরিমাণ জমি অনাবাদী পড়ে আছে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন (৪৩)। তাঁর জমিতে বোরো চাষ করার প্রয়োজনীয় পানির সংস্থান নেই। কারণ, তাঁর জমির আশপাশের শাখা খালগুলো মরে গেছে। তবে কাছাকাছি একটি বড় খালের পানি ওই এলাকার একটি ইরি গোলাতে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়।
সেখান থেকে ড্রেনের মাধ্যমে তাঁর জমিতে পানি আনতে খরচ পড়ে যায় অনেক বেশি। তাই ইচ্ছা থাকলেও তিনি বোরো আবাদ করতে পারেন না। মোশাররফ হোসেনের মতো চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলায় এমন অনেক কৃষক আছে, বোরো মৌসুমে পানির অভাবে যাদের জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়, কৃষক ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জন প্রতিনিধিদের মতে, খননের অভাবে এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত স্লুইস গেটের কারণে এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি খাল মরে গেছে। এগুলো খনন করা গেলে আরও প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আনা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সীতাকু- উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয় বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর ও বাড়বকু- ইউনিয়নে। এই চারটি ইউনিয়নে মধ্যে রয়েছে ১০টি বড় খাল। খালগুলো হলো-ডোমখালী খাল, বদর খাল, মহালঙ্গা খাল, বাঁকখালী খাল, অন্তর খাল, গুপ্তা খাল, মান্দারীটোলা খাল, কামানীয়া খাল, উলানিয়া খাল, গুলিয়া খাল। প্রতিটি খালের সাথে রয়েছে অনেকগুলো শাখা খাল।
শাখা খালগুলো পাশেই রয়েছে মহালঙ্গা বিল, লালানগর বিল, বগাচতর বিল, বাঁকখালী বিলঅলিনগর বিল, হাতীলোটা বিল, নডালিয়া বিল, লক্ষণের বিল, গোপ্তাখালী বিল, ভাটেরখীল বিল, গুলিয়াখালী বিল। বড় বড় খালগুলো জোয়ারের সময় পানি থাকলেও ওই শাখা খালগুলোতে পানি থাকে না। উপজেলার পানি নিষ্কাশনে নদীকেন্দ্রিক রয়েছে ১০টি খাল। এলাকা ভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণের সঙ্গে চাষাবাদের পানি জোগানদানে উপকার ভোগী হয়ে কাজ করছে খালগুলো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন কাজ না হওয়ায় ওপর থেকে নেমে আসা খালগুলো হয়ে উঠেছে জনগণের গলার কাঁটা।
এ অবস্থায় ভরাট ও দখলের কবলে পড়ে পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে খালগুলো জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. কমল কদর জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৫টি খাল খননের অভাবে মাটি ও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। পাহাড়ি এলাকায় কৃষকরা ভালো ফলন করলেও উপকুলীয় এলাকায় অনেক বিল চাষবাদহীন পড়ে আছে। তবে এবার শুষ্ক মৌসুমে খননের উদ্যোগ নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক দলের আহবায়ক বদিউল আলম বদরুল জানান, সীতাকুণ্ডের উপকুলীয় এলাকায় বেশিরভাগ জমি অনাবাদী পড়ে আছে। লবণাক্তের কারণে কৃষকরা চাষ করার আগ্রহ হারাচ্ছে। এই এলাকার বড় বড় খাল খননের পাশাপাশি শাখা খালগুলো জরুরি ভিক্তিকে খনন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, এখানকার খালের পানি লবনাক্ত হওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠে না। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এই তিন ইউনিয়নে বেশিরভাগ জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। তবে খানগুলো খনন করলে বোরো চাষ বাড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, সীতাকুণ্ডে ১৫ হেক্টর জমিতে বর্তমানে বোরা চাষ হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে খালগুলোতে পানি থাকে না। উপজেলার প্রতিটি খাল খনন করা গেলে আরও অন্তত পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের আওতায় আনা সম্ভব। এতে অন্য ফসলের চাষও সহজ হবে।