.
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নূর আলম বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় টানা তৃতীয়বারের মতো স্থান করে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এলসেভিয়ের যৌথ প্রতিবেদনে প্রফেসর ড. নূর আলম গবেষণায় ধারাবাহিক উন্নয়নে ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে তিনবার বিশ্বসেরা ২% গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তার গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র : সাবডিভিশন স্কিম, জ্যামিতিক মডেলিং, কম্পিউটার সাহায্যপ্রাপ্ত জ্যামিতিক নকশা, কম্পিউটার গ্রাফিক্স, মেকানিক লানির্ং, কৃত্তিম নিউরাল নেটওয়ার্ক, আইসোজিওমেট্রিক বিশ্লেষণ, সলিটক পদার্থবিদ্যা, পদার্থবিদ্যায় গাণিতিক মডেলিং, তাতি¦ক প্লাজমা পদার্থবিদ্যা, গাণিতিক পদার্থবিদ্যা, বিভিন্ন অখণ্ড ক্রম এবং অখণ্ডীয় অংশবিশেষ, অ্যানালিটিক্যাল নিউমেরিক্যাল মেথডস ফর ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন, গতিবিদ্যা, বিলিনিয়ার নিউরাল নেটওয়ার্ক কৌশল, ফ্লুইড মেকানিক্স, তরল গতিবিদ্যা, রক্ত প্রবাহ। তার গবেষণাপত্রগুলি এলসেভিয়ার, স্প্রিংগার, হিন্দাউই, ন্যাচার (সায়েন্টিফিক রিপোর্ট), উইলি, আইওপি বিজ্ঞান, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি এবং আমেরিকা ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স এর মতো নামী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রফেসর ড. মো: নূর আলমের ১৩০ টির বেশি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তার গবেষণা সাইটেশন সংখ্য ২,৭০০ ছাড়িয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক কনফারেন্সে কীনোট স্পিকার, ইনভাইটেড স্পিকার, ওরাল পেজেন্টার এবং গেষ্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এক্সিবিশন ও কনফারেন্সে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড ও স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।
বর্তমানে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন গবেষণা কাজে নিয়োজিত করছেন। প্রফেসর ড. মো. নূর আলম একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে সংগ্রাম, অধ্যবসায় এবং কঠোর প্ররিশ্রমের মাধ্যমে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন। পঞ্চগ্রাম জেলার আটোয়ারি থানার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া নূর আলম নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন বিশ^মানের গবেষক হিসেবে। প্রফেসর ড. মো. নূর আলমের শিক্ষা জীবন শুরু সহজ ছিল না। বাবা কৃষক, মা গৃহিণী পরিবারের আয় সীমিত আয়ে তাকে টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে যতে হয়েছে। তিনি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার তার ফল আশানুরূপ ছিল না। তবে পরবর্তী বড় ভাই প্রফেসর ড. মো. গোলাম হাফিজের উৎসাহ ও প্রেরণায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে স্নাতক, ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। তার স্নাতকোত্তরে গবেষণার বিষয় ছিল Studies on the nonlinear oscillations in perturbation theory. তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির গবেষণার সুপার ভাইজার ছিলেন প্রফেসর ড. জুলফিকার আলী (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন তাকে টিউশনি করে পড়ালেখা চালাতে হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষে গোল্ড মেডেল লাভ। তার অধীনে অনেক ছাত্রছাত্রী গবেষণা করছে যারা ভবিষ্যতে বৈশিক গবেষণায় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন বলে মনে করেন। এ বিজ্ঞানীর সঙ্গে রবিবার কথা হলে তিনি তরুণদের আরও বেশি বেশি গবেষণায় আত্মনিবেশের আহ্বান জানিয়ে বলেন জ্ঞান ও বিজ্ঞান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার সহজাত বুদ্ধি, প্রতিভা ও জ্ঞান দ্বারা বিজ্ঞানকে আবিষ্কার ও ব্যবহার করছে। অপরদিকে আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক আবিষ্কার দ্বারা মানুষের জ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটাচ্ছে। মানুষের আধুনিক জীবনকে বিজ্ঞান যুগোপযোগী গবেষণার মাধ্যমে সমসাময়িক নানামাত্রিক সমস্যা সমাধান করে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টির পাশাপাশি মানুষের জীবনকে সহজ ও উপভোগ্য করে তুলছে।