ধুসুর বর্ণের কান্ড আর পাতাগুলো সবুজ রঙ্গের পান পাতার মত লতাজাতীয় এই গাছের নাম চুইঝাল। বহু ঔষধি গুন সমৃদ্ধ লতা। এটি পিপারেসি পরিবারের অন্তভুক্ত। এর বৈঞ্জানিক নাম পিপার সিবা। সাধারণত দুই ধরণের চুই গাছ হয়। ঝড়চুই ও গেছো চুই। এর পুরুষ-স্ত্রী ফুল আলাদা লতায় জন্মে। পরাগায়ন প্রাকৃতিক ভাবে সম্পন্ন হয়। রসনা বিলাসীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। চিকিৎসকরা বলছেন চুইঝালে হহু রোগের নিরাময়। দিন দিন কদর বাড়ায় চুই ঝাল চাষ করে কুড়িগ্রামের অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছে।জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায় আম, তেঁতুল, সুপারী মেহেগনি পরগাছা হিসেব বাড়ছে লতাজাতীয় এই গাছ। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি চুই গাছের কান্ড ও ডাল মানভেদে ৪শ থেকে দেড় হাজার টাকা প্রকি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাটির নীচের অংশ শিকর চুইয়ের দাম বেশি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন-কার্তিকে চুইঝালের লতা লাগানোর উপযুক্ত সময়। একটি চুই গাছের পুরো অংশ স্বাভাবিকভাবে এক থেকে দেড় মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। চুই গাছে ফুল-ফল উভয়ই হয়। ফুল লাল, লম্বাটে। দূর থেকে দেখতে অনেকটা মরিচের মতো। কাছে গেলে ফলের প্রাকৃতিক নান্দনিক কারুকার্য ধরা পড়ে। বীজ থেকে চারাও হয়। কুড়িগ্রামে চুঁই ঝালের চাষ করে বাড়তি আয় করছে এখানকার কৃষকেরা।বাড়ির উঠানে পরিত্যাক্ত জমিতে আম গাছ,সুপারি গাছে পরজীবি লতা জাতীয় চুঁই ঝাল গাছ লাগিয়ে বছরে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন তারা। সার কীটনাশক ছাড়া সামান্য পরিচর্যা করে চুই ঝাল চাষাবাদ করা যায় বলে দিন দিন চুঁই ঝাল চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার কৃষকদের।চাকির কুটি গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলাম বাচ্চু জানায় আমার দুই বিঘা জমিতে আম ও সুপারির বাগানে চুই ঝালের গাছ লাগিয়েছি। গাছ লাগানোর তিন বছর পর থেকে চুই ঝাল বিক্রি শুরু করেছি। এ গাছে সার ও পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি মন চুই ঝাল বিক্রি হয় ৮ থেকে ১২হাজার টাকায়। চুই ঝাল বিক্রি করে বেশ ভালোই চলছে আমাদের সংসার। কৃষক মোঃ মকবুল হোসেন জানান, চুই ঝাল মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। বাজারে প্রতি কেজি চুই ঝাল দুই শো টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। মাংস রান্না ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ চুইঝাল না খেলেও দক্ষিন অঞ্চলের মানুষরা প্রচুর খায়। দু বছর ধরে চুইঝাল ভাল দামে বিক্রি করে আসছি। আগামীতে গাছের সংখ্যা আরো বাড়াবো।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিঞ্জান বিভাগের অধ্যাপক ও কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন,চুইঝাল মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি রান্নার মসলা হিসাবে দক্ষিনাঞ্চলে ব্যপক চাহিদা রয়েছে। ঐ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন মাংসে চুইঝাল ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া গাছটি ওষুধি গাছ হিসেবে বাত ব্যাথা নিরাময়ে কাজে লাগে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,কুড়িগ্রামে চুইঝাল চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। বাড়তি খরচ না থাকায় চুইঝাল বিক্রি করে ভালো আয় করছে কৃষকরা। জেলার সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ১৪ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে।
মসলা জাতীয় উদ্ভিদ চুইঝাল চাষে কুড়িগ্রামের কৃষকদের ব্যপক আগ্রহ বাড়ছে
শীর্ষ সংবাদ: