ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণে দগ্ধ ১২

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ও সংবাদদাতা, সীতাকুণ্ড

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণে দগ্ধ ১২

সীতাকুণ্ডে শনিবার এসএন করপোরেশনের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুরানো জাহাজ ভাঙার একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদিকে শনিবার বিকেলে চমেক হাসপাতাল থেকে আশঙ্কাজনক ৮ জনকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এ খাতে মালিকপক্ষের অনীহা ও ইয়ার্ডের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শীতলপুর তেঁতুলতলা এলাকার এসএন করপোরেশনের শিপ ইয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটার পর আবারও সমালোচনা শুরু হয় এ শিল্পের বিভিন্ন অবহেলাজনিত বিষয় নিয়ে। এসএন করপোরেশনের এ বিস্ফোরণে আহত শ্রমিকদের আর্তনাদে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। 
শনিবার এ ঘটনার পর সীতাকু-ের ওই ইয়ার্ড থেকে দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এরপর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের বার্ন ইউনিটে পাঠায়। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ১২ জন ভর্তি আছেন। তাদের ১০ থেকে ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আর সবারই শ্বাসতন্ত্র কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীরের শরীরের ৭০ শতাংশ, আহমদ উল্লাহর ৯০, কাশেমের ৩৫, সাগরের শরীরের ২৫ শতাংশ, আল আমিনের ৮০, মইনুলের ৮০, হাবিবের ৪০, বরকতের ৫০, আনোয়ারের ২ এবং রফিকের ১০ শতাশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া রফিকুল ও সাইফুলের দুজনের কানে সমস্যা হয়েছে।
শিপ ইয়ার্ডগুলো একেকটি মৃত্যুকূপে পরিণত হলেও এর সুষ্ঠু তদারকি নেই বললে চলে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাহাজ ভাঙা শিল্পটি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের লোভের কারণে বলি হচ্ছে শ্রমিকরা। সেখানে যথাযথভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার যেমন হয় না একইভাবে মালিকপক্ষ থেকেও বিপজ্জনক উপাদানগুলো রক্ষায় নেওয়া হয় না ব্যবস্থা। যার ফলে দুর্ঘটনা থামে না।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অবস্থা এতটাই নাজুক যে তারা কথা বলার অবস্থায় নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ১২ জনের মধ্যে ১০ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের শ^াসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসএন করপোরেশনে কর্মরত প্রত্যক্ষদর্শীদের পক্ষে জানানো হয়েছে, যে জাহাজটি কাটা হচ্ছিল তা শেষ পর্যায়ে ছিল। শনিবার জাহাজের পাম্প রুমে বিস্ফোরণ ঘটলে আগুন লেগে দগ্ধ হয় শ্রমিকরা।

হঠাৎ কারখানার ভেতর বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আশপাশের শ্রমিকরা ইঞ্জিন রুমের পাশে জড়ো হয়। এরপর সেখান থেকে দগ্ধ ১২ জনকে একে একে বের করে আনা হয়। যাদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এরপর তাদের চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুরোপুরি শ^াসনালী পুড়েছে। ৩৫ শতাংশের ওপর পোড়া রোগীদের অবস্থা নাজুক। ৮০ ও ৯০ শতাংশ পোড়া রোগীরা জীবন সংকটে। 
উল্লেখ্য, জাহাজভাঙা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও বঞ্চিত। নানা রকমের দুর্ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে জোরদার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বেশির ভাগ সময় চিকিৎসা সুবিধা ও অন্যান্য আইনগত ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত থাকে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের শ্রমিকেরা।

এ শিল্পটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অর্থের জন্য যেসব শ্রমিকরা চাকরি করে তাদের জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও ইয়ার্ডের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় না। ফলে অবহেলিতই থাকে এ খাতের শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) জানিয়েছে বিগত ৯ বছরে ১২৪ জন জাহাজ ভাঙা শ্রমিক নিহত হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনায়।

×