ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জনকণ্ঠে প্রতিবেদন দেখে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রীর

চাকরি পেলেন বগুড়ার সেই রিক্সাচালকের এমএ পাস স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

চাকরি পেলেন বগুড়ার সেই রিক্সাচালকের এমএ পাস স্ত্রী

সিমানুরকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বগুড়ার ডিসি কার্যালয়ে চাকরি

দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদন রিক্সাচালক ফেরদৌস ও তার স্ত্রী সিমানুরের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে। সংগ্রামী এই দম্পতির জীবন সংগ্রামের পথে আলো ফুটিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও উপহার। উচ্ছ্বসিত আনন্দ ও অনাবিল হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে তাদের ছোট্ট পরিবার। কষ্টের পথ পেরিয়ে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর এখন তারা। 
জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আসার পর ভাগ্য বদলে যায় প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারটির। রিক্সাচালক ফেরদৌস ম-লের স্ত্রী এখন বগুড়ার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক। চাকরির সঙ্গে মিলেছে সিমানুরের স্বামী রিক্সাচালক ফেরদৌস ম-লের রিক্সা কেনার ঋণ পরিশোধের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বাড়ি সংস্কারের টিন, এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রিক্সাচালকের উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী যেন শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিতে পৌঁছাতে পারেন, সে জন্য একটি ল্যাপটপ। 
এসবই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হয়েছে বলে জানালেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। সোমবার সিমানুরের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে তিনি স্কুলে গিয়ে সহকারী স্কুলশিক্ষক পদে যোগদান করেন।
শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকা, দেশের সব জনপদের মানুষই যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমান নজরে থাকেন, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের ফেরদৌস-সিমানুর দম্পতি তার উদহারণ। রিক্সাচালক ফেরদৌস ম-ল বিয়ের পর স্ত্রী সিমানুরকে কথা দিয়েছিলেন, বাধা-বিপত্তি হলেও তিনি স্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী লেখাপড়া চালাবেন। তখন তার স্ত্রী এসএসসি পরীক্ষাথী ছিলেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে দেওয়া সেই কথা ফেরদৌস রেখেছিলেন। রিক্সায় স্ত্রীকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তিনি নিজে রিক্সা চালিয়ে সংসারের বোঝা টেনেছেন। সিমানুরের লেখাপাড়ার খরচ জুগিয়েছেন। স্ত্রীকে এমএ পাস করিয়ে আবার স্ত্রীর জন্য চাকরির সন্ধানে নামেন। 
এই দম্পতির সংগ্রামী জীবনকথা নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে গত ১১ জানুয়ারি একটি ফিচার প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খোঁজ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে গাবতলী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগবাড়ী এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বগুড়ার জেলা প্রশাসক সোমবার সিমানুর-ফেরদৌস দম্পতিকে তার কার্যালয়ে ডেকে এনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরির নিয়োগপত্রসহ অন্যান্য সহায়তা তুলে দেন। 
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আল মারুফ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাউল করিম, বগুড়া কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আল মামুন সরদার, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল আলম নয়ন, স্টাফ ফটোগ্রাফার শফিউল আজম কমল, বগুড়ার সিনিয়র সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম আখতারুজ্জামন, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জে এম রউফ, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বাবুসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। 
চাকরির নিয়োগ পেয়ে রিক্সাচালক ফেরদৌস ম-লের স্ত্রী সিমানুর খাতুন কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ বগুড়ার প্রাথমিক শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
চাকরির নিয়োগপত্র ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারসহায়তা পেয়ে সিমানুর খাতুন ও তার স্বামী ফেরদৌস ম-ল আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়নে। আনন্দের অশ্রু বারবার মুছতে দেখা যায় তাদের। তারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করে জানান, প্রধানমন্ত্রী যেন দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারেন। ফেরদৌস জানান, তার স্ত্রী যেন বিসিএস ক্যাডার হন বা ভালো সরকারি চাকরি ভবিষ্যতে পান, এটাই তার আশা।

জেলা প্রশাসক জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার জেলা প্রশাসন এই দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছে। তাদের জন্য আরও ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা থাকবে। জনকণ্ঠে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে তা অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ এবং আবেদনময়। সিমানুর রিক্সাচালকের স্ত্রী হয়েও উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু এমএ পাস করেই তিনি থামেননি, কম্পিউটারে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এ জন্য তাকে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠ আগামীতেও জনকল্যাণে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

×