ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

৫০০ টাকার জেরে হামলার শিকার হন কবি রাধাপদ

স্টাফ রিপোর্টার,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:২২, ৩ অক্টোবর ২০২৩

৫০০ টাকার জেরে হামলার শিকার হন কবি রাধাপদ

হামলার শিকার হন কবি রাধাপদ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর কবি রাধাপদ রায়ের হামলার ঘটনা কোন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নয়। তার হামলার ঘটনা পূর্বশত্রুতার জের। বিয়য়টি ফেসবুকের মাধ্যমে কবি রাধাপদ রায় হামলার ছবি প্রকাশিত হলে জেলাসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। 

গ্রামবাসী,কবি রাধাপদ রায় ও তার সন্তানদের সাথে কথা বলে জনকন্ঠের এই প্রতিবেদক দিনভর অনুসন্ধান করে সম্পূর্ন আলাদা তথ্য তুলে এনেছেন। ছয় মাস আগে ৫০০ টাকা নিয়ে এক সালিসে বাগবিতন্ডার জের ধরেই কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ‘স্বভাব কবি রাধাপদ রায়ের (৮২) ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। হামলায় আহত রাধাপদ রায় বর্তমানে নাগেশ্বরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসাধীন আছেন। জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সাইদুল আরিফ ও পুলিশ সুপার আসাদ আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম সোমবার রাতে নাগেশ্বরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাধাপদকে দেখতে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
 
নাগেশ্বরী থানা পুলিশ জিঙ্গাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করে। রাধাপদ রায় ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। গত শনিবার সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার গোদ্দারেরপাড় এলাকায় নিজ এলাকায় রাধাপদ রায় হামলার শিকার হন। পার্শ্ববর্তী এলাকার দুই ভাই মো. রফিকুল ইসলাম ও কদুর আলীর বিরুদ্ধে এ হামলার অভিযোগ ওঠে। কবিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ভর্তি করেন।
কবি রাধাপদ রায়ের ছেলে জুগল রায় গত রবিবার রাতে অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেন। তবে ঘটনার তিন দিন পরও অভিযুক্ত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান জানান, ঘটনার দিন থেকে তারা দুই ভাই পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

রাধাপদ রায়ের ছেলে জুগল রায় জানান, তার বড় ভাই মাধব রায় ও নাগেশ্বরী পৌরসভার হাসেম বাজার এলাকার মিলন ঢাকায় একসঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মিলন এক সময় বাড়িতে এসে দাবি করেন, তিনি মাধব রায়ের কাছে কাজের টাকা পায়। এ নিয়ে তিনি ছয় মাস আগে এলাকায় সালিস ডাকা হয়। সেখানে একসঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করা স্থানীয় শ্রমিকেরা উপস্থিত হন। ওই  সালিসে হিসাবের খাতায় দেখা যায়, মিলন মাধব রায়ের কাছে ৫০০ টাকা পাবেন। পরে সালিস বৈঠকের মাধ্যমেই তা ফেরত দেন  বাবা রাধাপদ রায়।

তিনি আরও বলেন, ওই সালিসে একই উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের কচুয়ারপাড় এলাকার কদুর রহমান এসে উপস্থিত হন। তিনি এলাকায় গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলাকালে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন রাধাপদ রায়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সে সময় কদুর রহমানের সঙ্গে রাধাপদের বাগ্বিতন্ডা হয়, যা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। পরে কদুর রহমানের ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলাম এ ঘটনার প্রতিশোধ নেবেন বলে হুমকি দেন।

ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী লিটন রায় (২৯)। তিনি জানান, দুই শতাধিক মানুষ সালিস বৈঠকে বসেছিল। সেখানে স্থানীয় শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকা নিয়ে কদুর রহমানকে অপমানিত করে। এতে কদুর রহমান রাধাপদ রায়ের স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে কবি রাধাপদ ক্ষিপ্ত হলে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এরই জের ধরে শনিবার সকালে কদুর আলীর ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলাম কবিকে একা পেয়ে তাঁর ওপর দেশীয় অস্ত্র (বাঁশের লাঠি) দিয়ে অতর্কিত হামলা চালান এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে চলে যান।

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বেডে কবির সাথে কথা হলে তিনি বলেন,'আমি সাধু সঙ্গ করি,কীর্তন-গান বাজনার করে জীবিকা নির্বাহ করি। গান,কীর্তন কিংবা সাধু সঙ্গের জন্য পূর্বে কখনো আমাকে কেউ  কটু কথা বলেনি বা খারাপ ব্যবহার করেনি। মূলত ৬ মাস পূর্বে আমার ছেলের সাথে অভিযুক্তের সাথে একটি বাক-বিতন্ডা হয় সেই রেশ ধরে আমাকে শনিবার বাঁশ দিয়ে মারধর করে। 

তিনি আরও বলেন, রফিকুলের সঙ্গে তাঁর আগের কোনো শত্রুতা ছিল না। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কদুর আলী তাঁর ভাই রফিকুল ইসলামকে দিয়ে হামলা চালান। অথচ ছয় মাস আগের ওই ঘটনা আমি ভুলে গিয়েছি।

জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সাইদুল আরীফ জানান তিনি কবি রাধাপদ রায়ের হামলার ঘটনাটি কোন সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। গ্রামবাসীর সাথে সামান্য মনোমালিনের জেরের এ ঘটনা ঘটে। আমি নিজে হাসপাতালে গিয়ে তার খোঁজ খবর নিয়েছি। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। যারা তার উপর হামলা চালিয়েছে তাদের দ্রত আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে একটি মামলাও হয়েছে। 
 

এস

×