বেগুন চাষ
প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, কাঁসা, গুড় ও বেগুন এই তিনে মিলে ইসলামপুর। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জামালপুরের ইসলামপুরের চরাঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রতি বছর রবি মৌসুমে ইসলামপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়ে থাকে। স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচের বেগুন চাষে অধিক টাকা আয় করে থাকেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই স্থানীয় কৃষকরা বেগুন খেতকে (বেগুন টাল) টাকার গাছ বা টাকার ক্ষেত নাম দিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় বেগুন চাষিরা তাই আগে ভাগেই বেগুন চাষে মাঠে নেমেছেন। ইসলামপুরের চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বেগুন, শীতের সবজি হিসাবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক কদর ও সুখ্যাতি রয়েছে। ইসলামপুরের উৎপাদিত সাদা, কালো ও বল বেগুন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া বেগুন চাষে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বাড়ছে চাষীর সংখ্যা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের এক হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছিলো।
উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন বেগুন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের এক হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন বেগুন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এক হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদন হয়েছে।
এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এক হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বেগুন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছেন স্থানীয় কৃষি অফিস। এতে ৫২ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে এক কেজি বেগুন ৫০ টাকা। ফলে এক মেট্রিক টন বেগুনের দাম দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা।
আর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বেগুন উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ৫২ হাজার ৩৯০ মেট্র্রিক টন বেগুনের মূল্য ৫০ টাকা দরে আনুমানিক বাজার মূল্যে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে সাড়ে চার হাজার বেগুনের চারা রোপন করা যায়। ফল আসতে ৪৫ দিন সময় লাগে। এ সময় পর্যন্ত কৃষকদের খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মতো।
আবহাওয়া ও জমির উর্বরতা ভালো হলে ৪৫ দিন পর থেকে টানা তিন মাস প্রতি সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ মণ বেগুন তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। গড় হিসাবে এ তিন মাসে বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়ে থাকে ২২০ মন বেগুন। পাইকারি গড় হিসাবে ২০ টাকার দরে বাজার মূল্যে দাঁড়ায় এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
চরপুটিমারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর চরের কৃষক শফিকুল ইসলাম জনকন্ঠকে জানান, তার গত বছরের এক বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকার মতো। আর বেগুন বিক্রি করেছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করেছেন।
একই এলাকার কৃষক আমজাদ মিয়া বলেন, বেগুনে আরও লাভ বেশী হতো। সঠিক সময়ে যদি কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের সঠিক পরামর্শ দিতেন। তারা আমাদের কোন খোঁজখবরই রাখেন না। আমরা গ্রামের মানুষ চাষাবাদ করেই সংসার চালাই। সব সময় মাঠেই পড়ে থাকি। গত ১৫ দিন হলো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চারা গাছ লাগিয়েছি। মাঝে খেতের কিছু চারা গাছ মারা যাচ্ছে।
গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর এলাকার সোহাগ মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, সত্যি বলতে আমরা কৃষক মানুষ। এই যে আমি এক বিঘা জমিতে বেগুন গাছের চারা লাগিয়েছি, এটাকে আমি চারা গাছ মনে করি না, মনে করি টাকার গাছ। আশা করছি, গত বছরের মতো এ বছরেও ভালো ফলন হবে। তাই দিন রাত রোদে পুড়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছি কিছু-টাকা লাভের আশায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি বেগুন চাষে। তাই তারা আমাদের পরামর্শে চাষিরা আগে ভাগেই আগাম বেগুন চাষে মাঠে নেমেছেন।
এ উপজেলায় বারি-১ জাতের বেগুন বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া বোম্বাই বেগুন, লম্বা বেগুন ও বাগলতি (ফম বেগুন) বেগুন নামে আরও তিন জাতের বেগুনের চারা রোপণ করা হয়েছে।
জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, এ উপজেলার মাটি পলি দোআঁশ হওয়ায় এখানে বেগুন চাষ বেশি হয়। আমরাও কৃষকদেও বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করি ও বেগুন চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। সারা দেশে এ বেগুনের চাহিদা রয়েছে।
এসআর