ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারখানা নদীর বাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে তিন ইউনিয়নের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৬ মে ২০২৩; আপডেট: ১১:১৬, ২৬ মে ২০২৩

কারখানা নদীর বাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে তিন ইউনিয়নের মানুষ

নদী

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কারখানা নদী গ্রাস করেছে দুধল,দাড়িয়াল ও ফরিদপুর তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার বসত বাড়ি। এসব ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ৮ হাজার একর ফসলি জমি নদী গর্বে বিলীন হয়েছে। এখন দুধল ইউনিয়নের শর্শি বাজার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। 

বাজারে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে। অনেক দোকান কারখানা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শর্শি বাজারের ব্যাবসায়িরা ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। 

দুধল ইউনিয়নের শর্শি বাজার হয়ে পার্শ্বতী ইউনিয়ন দাড়িয়ালের সঙ্গে সংযোগ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কারখানা নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী বাঁধ ভাঙনে শর্শি গ্রাম সহ দক্ষিণ কাজলাকাঠি আন্দারমানিক,মাহমুদ নসীব,বিষারিকাঠি গ্রাম বর্ষা মৌসুমে নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ফসলি জমি। তখন নদীর জোয়ারের পানি বসত বাড়িতে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে এইসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। 

এছাড়াও কবাই ইউনিয়নের শিয়ালঘুনী টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজন্ট কলেজটি ও শিয়ালঘুনী ৭০নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কারখানা নদীর ভাঙ্গনে পড়লে স্থানান্তর করা হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানা নদীর দুই পারে গড়ে ওঠা দুধল,কবাই ও ফরিদপুর তিন ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ভাঙনের মুখে। হুমকির মুখে আছে নতুন করে গড়ে উঠা কবাই বাজার, ৪ নং দুধল ইউনিয়নের শতরাজ বাজার, শর্শি বাজার। যে কোনো মুহূর্তে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

দুধল ইউনিয়নের শর্শি গ্রামের বাসিন্দা সৌয়দ আলী মুন্সি জনকণ্ঠকে জানান, যুগের পর যুগ কারখানা  নদীর ভাঙনে আমাদের গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে। এখন দুই বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ভেরি বাঁধ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি কেউ চেষ্টাও করছে না। এখনো নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। 

শর্শি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি ও শত শত একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। এতে এই এলাকার অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাজারে,নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

অপরদিকে দেখা যায়, কারখানা নদীর ভাঙনে ফরিদপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ফরিদপুর গ্রাম ও চর রাঘুনদ্দি গ্রাম ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে। ১২৮ নং চর রাঘুনদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। পশ্চিমা ফরিদপুর গ্রামের ভেরি বাঁধ বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে।

ফরিদপুর গ্রামের শাহজাহান মল্লিক জানান, প্রায় এক যুগ আগে থেকে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সড়ক বসত বাড়িসহ ফসলি জমি। সরকারি ভাবে ভাঙন রোধে নেই কোনো কার্যকরী ব্যাবস্থা। অনেক পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসেছেন। প্রতি বছর বেরিবাঁধ ভেঙে বর্ষা মৌসুমে লোকালয়ে পানি চলে আসে। কৃষি কাজ সঠিক ভাবে হচ্ছে না। অব্যাহত ভাঙন রোধ করা না হলে খুব কম সময়ে পশ্চিম ফরিদপুর গ্রাম নদীতে চলে যাবে।

কবাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহিরুল তালুকদার জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ঘর অনেক আগেই নদীতে হারিয়েছি। বাড়ির সামনে পারিবারিক গোরস্থান ছিল তাও নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।

ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস, এম, শফিকুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে বড় ধরনের বরাদ্দ দরকার। না হলে আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা  করছি যাতে আমাদের ইউনিয়নটি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পায়।

দুধল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বল জানান, কারখানা নদীতে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শত শত পরিবার ভিটে মাটি হারিয়ে পথে বসবে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, কারখানা নদী ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

এসআর

×