ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে  বিএনপি

নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত নওগাঁ-৬ আসন

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৭ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ১৭:৪১, ২৭ মার্চ ২০২৩

নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত নওগাঁ-৬ আসন

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নওগাঁর একাধিক আসনে শুরু হয়েছে প্রচারণা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান দিচ্ছেন আমি প্রার্থী হতে চাই, পেতে চাই মনোনয়ন। সংসদীয় আসন-৫১, নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) এই আসনে সরাসরি প্রচারে এবং সোস্যাল মিডিয়ায় নৌকার মনোনয়ন চেয়ে মানুষের দোয়া চাচ্ছেন অন্তত হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। 

দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, সাবেক এমপি মরহুম ইসরাফিল আলমের সহধর্মিনী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুলতানা পারভীন বিউটি, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. মো: ইউনুস আলী প্রামাণিক এবং রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা ও উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহমান।

এ নির্বাচনকে ঘিরে গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার ও পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের কোন না কোন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রতিদিনিই প্রায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নৌকা প্রতিকের ভোট চেয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের দখলেই আছে মাঠ। 

এছাড়া স্বামীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও এবার চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সুলতানা পারভীন বিউটি। পাশাপাশি মাঠে আছেন সুমন, নওশের। এছাড়া আওয়ামী পরিবারের সন্তান দুই ভাইকে হারানো তরুণ নেতা বিপ্লবও স্মার্ট নেতৃত্বের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।  

অপর দিকে আগামী নির্বাচনে কোনো ভুল করতে চায় না বিএনপি। বিএনপির একাধীক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তারা দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু শেখ। তিনি গত নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার পাশাপাশি জেলা তাঁতী দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: এচাহক আলী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। 

এছাড়াও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবির আসলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। জাতীয় পার্টি থেকে রানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী নাহিদ ইসলাম বিপ্লব বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ ও লালন করে রাজনীতি করতে নেমেছি। আজও তার আদর্শে রাজনীতি করছি। তাই গত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন না পেলেও নৌকার পক্ষে স্বত:স্ফুর্তভাবে কাজ করেছি। কারণ আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। রাজনীতি করতে গিয়ে আমার বড় ভাই রাজা এবং চাচাতো এক ভাই শহীদ হয়েছেন। তবুও আমি রাজনীতি থেকে পিছপা হইনি। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে যে ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে স্মার্ট মেধাবী দক্ষ নেতৃত্বই নিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। এই জন্য আমি শতভাগ বিশ্বাসী আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিবে।

নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. ওমর ফারুক সুমন বলেন, যোগ্যতা ও তৃনমুলের জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে, আমি শতভাগ আশাবাদী, আমিই পাবো। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলে আত্রাই-রানীনগরের মানুষ আমাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবে। আমি নির্বাচনে বিজয়ী হলে আত্রাই রাণীনগরের বন্যা সমস্যা দুর করবো, দুই উপজেলার হেড কোয়ার্টার পৌরসভা, তিনটি রেল স্টেশনকে আধুনিকায়ন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, কৃষি ও মৎস্য গবেষণাগার, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানসহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করবো।

বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমার পরিবারকে আওয়ামীলীগের আতুর ঘড় বলা হয়। রাজনীতি করতে গিয়ে দুই ভাইকে হারিয়েছি, এক সময়ে হয়েছি নির্যাতিত, নিপিড়িত তবুও পিছপা হইনি। বিদ্রোহী থেকে হয়েছিলাম উপজেলা চেয়ারম্যান। এরপর উপনির্বাচনে ৩৪ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে নেত্রীকে এই আসন উপহার দিয়েছি। এমপি নির্বাচিত হয়ে আমি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন করেছি। 
সড়কে চাঁদা বাজি বন্ধ করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। 

তিনি বলেন, আমি শাসক না, সেবক হতে চাই। বড় দল হওয়ায় এই আসনে আরও দু-একজন মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের চাওয়া এই এলাকার গ্রামকে শহরে রুপান্তরিত করার জন্য আরেকবার নৌকা প্রতিকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করা হোক। 

হেলাল বলেন, আমি তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। নির্বাচনী এলাকার অসহায় ও দুস্থদের পাশে থেকেছি সবসময়। আমার বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে জনসমর্থন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত আমার পক্ষেই থাকবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি শাহিন মনোয়ারা হকসহ অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার রোল মডেল। তাই সম্রার্ট বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। তবে নির্বাচনী এলাকার নেতা কর্মীর মধ্যে পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মতভেদ থাকলেও নৌকা প্রতিক নিয়ে কারো কোন বিরোধ নেই। তাই দলের হাইকমান্ড যোগ্য মনে করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ আসনে যাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। জেএমবি'র অপতৎপরতা দমনের পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের দাবি করে আগামী নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। 

আর আসনটি ফিরে পেতে নতুন আমেজে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, দলের হাইকমান্ড যোগ্য মনে করে এ আসনে যাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। তবে যদি সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচন হয় তাহলে এ আসনটিতে আবার বিএনপি জয়লাভ করবেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২০১৪ সালের সরকারকে অবৈধ সরকার বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) বর্তমানে কিছু দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সফল হলে দলটি নির্বাচনে যাবে।

আসন্ন ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ভাবনা জানতে চাওয়া হয় এলাকার সাধারণ, তরুণ ও নতুন ভোটারদের কাছে। তারা বলেন, স্মার্ট দেশে স্মার্ট নেতৃত্বই দরকার। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন এলাকার উন্নয়ন করবেন এরকম যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দিবেন। এছাড়া ভোটারদের প্রত্যাশা, শুধু ভোটের সময় নয়, নির্বাচিত এমপি সারা বছরই তাদের গ্রাম-মহল্লায় আসবেন। তবে সাধারণ জনগণ বলছেন, যাদের কর্মী আছে, যারা এলাকায় থাকেন, দলের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখেছেন, তাদের মধ্যেই কেউ প্রার্থী হলে ভালো হয়। কেউ বলছেন পরিবর্তন হোক, আবার কেউ বলছেন পরিবর্তন চাইলেই হবে, দল চালানোর মত দক্ষতা ও জনবল থাকতে হবে, জনগণের সঙ্গে মিশতে হবে, বাড়িতে বসে রাজনীতি হয় না। এক্ষেত্রে বর্তমান এমপিকেই আরেকবার সুযোগ দেয়ার ইঙ্গিত দেন অনেকে। পাশাপাশি পরিবর্তন চান কেউ কেউ।    

নওগাঁ-৬ আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালে পর্যন্ত বিএনপি’র দখলে ছিলো। তখন বিএনপি’র সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: ইসরাফিল আলম এমপি নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বিএনপি থেকে এলডিপিতে যোগ দেয়ায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মো: ইসরাফিল আলম পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ২০২০ সালের ২৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করায় এই আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাণীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল।
 

এসআর

×