ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর  

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

ইসলামপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল কাদের শেখ, ছবি : জনকন্ঠ

জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল কাদের শেখের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অনাস্থা চেয়ে ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন পৌর কাউন্সিলররা। 

সেই সঙ্গে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও লিখিতভাবে আবেদন করেন পৌরসভার কাউন্সিলররা। 

ইসলামপুর পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জনই ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেন। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের শেখ টানা তৃতীয় বারের মত মেয়রের পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্বে থেকে পৌরসভায় নিজের একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। 

কাউন্সিলরদের অনাস্থা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেয়র আব্দুল কাদের শেখ একজন সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারী, দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্চাচারী। বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের (বিজেসি) পাটগুদাম ঘরের টিন, সেখানকার মূল্যবান বহু গাছকাটাসহ গুদামের অন্যান্য মালামাল আত্মসাৎ করেছেন তিনি। একই সাথে তিনি সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি ও পৌরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। 

পৌরবিধি উপেক্ষা করে তিনি পৌরসভার মাস্টাররোলের কর্মচারী মো. রাসেলকে পৌরসভার ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়েছেন। ওই কর্মচারী যেসব কাজ করেছেন তা খুবই নিম্নমানের। শুধু তাই নয়, প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ না হলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাসেলের কাজের বিল প্রদান করা হয়েছে। 

এছাড়াও তিনি পৌরসভার উন্নয়ন কাজে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পৌরসভার বিধি মোতাবেক মাসিক সভার নোটিশ সাত দিন আগে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা না করে, মাত্র একদিন আগে অথবা সভায় বসে নোটিশ খাতায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। ৩-৫ মাস পর পর মিটিং ডেকে কোনো আলোচনা ছাড়াই রেজুলেশনে কাউন্সিলরদের শুধু মাত্র স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। রেজুলেশনের কপি দেওয়ার বিধান থাকলেও তা দেওয়া হয় না। 

পৌরসভার কোনো কার্যক্রম বা অনুষ্ঠানে কোনো কাউন্সিলরদের রাখা হয় না। তিনি নিজের ইচ্ছা মত তার পছন্দের লোকজন দিয়ে সব কাজকর্ম করে থাকেন। অভিযোগে আরো জানা গেছে, মেয়রের আমলে যেমন উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়ন কাজে তেমনি দুর্নীতিও হয়েছে। 

উদাহরণস্বরূপ- পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের পাটনিপাড়া থেকে আট নম্বর ওয়ার্ডের মোশারফগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক বাতির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রাক্কলন মোতাবেক ওই কাজ না হলেও ঠিকাদারকে ওই কাজের শতভাগ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। 

এসব কারণে পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন কাউন্সিলর মেয়র আব্দুল কাদের সেখের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করে তাকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোহন মিয়া বলেন, মেয়র পৌরসভার সকল কার্যক্রমে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। 

তিনি আমাদের সাথে কোন বিষয়ে সমন্বয় করেন না। কাউকে মানেন না তিনি। তার মতো করে পৌরসভা পরিচালনা করেন তিনি। আমরাও যে জনপ্রতিনিধি তিনি তা কখনোই মনে করেন না। চার-পাঁচ মাস পরপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকের মাধ্যমে মুঠোফোনে কল করে আমাদের অফিসে ডেকে নিয়ে নোটিশ ও রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। তাকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। 

কাউন্সিলররা জানান, ২০১৭ সালে মেয়রের বিরুদ্ধে পৌরসভার নারী সচিবকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় দুই কোটি টাকার গোপন দরপত্রে স্বাক্ষর না দেওয়ায় ওই সচিবকে লাঞ্ছিত করেছিলেন মেয়র। পরে ওই সচিব স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই ওই সচিব ইসলামপুর থেকে বদলি হয়ে চলে যান। 

এ ঘটনায় ওই সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত হয়েছিল। অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র আব্দুল কাদের শেখ জনকণ্ঠকে বলেন, কাউন্সিলরদের অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির শিকার হয়েছি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে আমাকে নিয়ে ইসলামপুরে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কাউন্সিলরদের দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ এসব অভিযোগ করাচ্ছে। 

মেয়রের অনাস্থা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থার আবেদনের কপি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা এখনো পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন আদেশ পাইনি। 

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×