ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবির কড়া প্রতিবাদ

তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি ওপারে উড়ছে ড্রোন এলাকায় আতঙ্ক

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৩ অক্টোবর ২০২২

তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি ওপারে উড়ছে ড্রোন এলাকায় আতঙ্ক

মিয়ানমারের তুমব্রু সীমান্তে ফের মর্টার শেলের বিকট শব্দে তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত কাঁপছে

মিয়ানমারের তুমব্রু সীমান্তে ফের মর্টার শেলের বিকট শব্দে তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত কাঁপছে। রবিবার মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহতসহ দুই রোহিঙ্গা যুবক হতাহতের আগে অন্তত ১০ দিন ধরে কোন ধরনের বোমা বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। ১০ দিন পর দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা সোমবার সকাল থেকে মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। দুপুরে কয়েক ঘণ্টা বিরতির পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে ফের গোলা নিক্ষেপ চলছে। রাখাইনের আকাশে উড়ছে ড্রোন। এ অবস্থার কারণে সীমান্ত এলাকায় ফের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।  
সূত্র জানায়, সোমবার সকালে ঘুমধুম বরাবর ওপারে ঢেকিবনিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে তুমব্রুর কাছাকাছি মেদী ক্যাম্পকে লক্ষ্য করে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে পর্যায়ক্রমে ৫টি মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মেদী ঘাঁটিটি অন্তত তিন সপ্তাহ আগে থেকে আরাকান আর্মির দখলে নিয়ে গেছে। ওই ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধারে সেনাবাহিনী যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। এখনও মেদী ঘাঁটি আরাকান আর্মির (এএ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে দেড় মাসের চেয়েও বেশি সময় ধরে লাগাতার সংঘর্ষ হয়েছে। ইত্যবশরে আরাকান আর্মি উত্তর মংডুর ১২টি সেনা-পুলিশ ঘাঁটি তাদের দখলে নিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে দুইশ’ জনেরও বেশি সেনা-পুলিশ সদস্য যোগদান করেছে আরাকান আর্মিতে। তারা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে অস্ত্র-গোলাবারুদও। এতে মরিয়া হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া ঘাঁটিগুলো পুনরুদ্ধারে তৎপরতা চালায় সেনাবাহিনী। আকাশ পথে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানে হামলা করা হয়েছে আরাকান আর্মির চিহ্নিত ক্যাম্প বরাবর।

তারপরও সেনা সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ক্যাম্পগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। মাঝখানে ১০ দিন যুদ্ধবিরতির পর সোমবার সকাল থেকে আবারও বোমা নিক্ষেপ শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে সকাল থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা পাল্টা কোন গোলা ছুড়ে জবাব দেয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যখন সেনা সদস্যরা পরপর তিনটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে, এরপর সাহসিকতার পরিচয় বহন করতে আরাকান আর্মির সদস্যরাও ৫টি মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ রিপোর্ট লেখাকালীন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল।
সূত্র আরও জানায়, মিয়ানমার সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সিপাহী অস্ত্রসহ আরাকান আর্মিতে যোগদান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা। অজানা বিষয়ে মধ্যখানে অন্তত ১০ দিন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কোন ধরনের বোমা-গোলাগুলি থেকে বিরত থাকে। ওইসময় শান্ত ছিল বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলের আঞ্জুমানপারা, রহমতেরবিল, বালুখালী, ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশপাড়ি ও চাকমাপাড়া ইত্যাদি অঞ্চল। সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে ফের গোলা নিক্ষেপ শুরু করেছে দেশটির সরকারী বাহিনী।

প্রতি উত্তরে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সদস্যরাও মর্টার শেল নিক্ষেপ করে জানান দিচ্ছে তারাও সজাগ রয়েছে। সকালে ঢেকিবনিয়া ক্যাম্প থেকে মর্টার শেলের শব্দ শুনে ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পের জওয়ানরা আরও সতর্ক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ সীমান্তে জোরদার করা হয়েছে বিজিবির টহল তৎপরতা। তুমব্রু সীমান্তেও সন্ধ্যায় বিজিবির টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচ- গোলাগুলির পর এবার ড্রোনও উড়ানো হচ্ছে মিয়ানমার অভ্যন্তরে। দেশটির সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থানকারী বিদ্রোহী গ্রুপ এএ সদস্যদের ওপর বোমা-মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সোমবার উভয় সীমান্তের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং পিলার বরাবর এই ড্রোন উড়তে দেখেছেন বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীরা। সকালে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকার লোকজন।

দ্রুত উড়ন্ত ড্রোন দেখে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ফের গোলাগুলি শুরু করার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে (বেতার বার্তা) মেসেজ পাঠিয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির (পুলিশ) কাছে। সীমান্তে বসবাসকারী কাউকে আতঙ্কিত না হতে বিজিবির পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাতের জেরে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জোরদার করেছে টহল।
তবে তুমব্রুবাসী বলছেন, মর্টার শেলের বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠেছে তুমব্রু এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজারে দোকানিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৮ নম্বর পিলার থেকে ৪১ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার অঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গত দেড় মাস ধরে ব্যাপক গোলাগুলি চলে আসছে। বিদ্রোহীদের দমনে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা ওয়ালিদং ও কক্যদইঙ্গা পাহাড়ের পেছনে লামুশিং ও বদলা পাহাড়ী এলাকায় আরাকান আর্মির ঘাঁটি রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হয়ে সোমবার সেখানেও আক্রমণ করেছে। তবে আরাকান আর্মির সদস্যরাও পাল্টা গোলা ছুড়েছে।

×