ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জাপুরে প্রধান আকর্ষণ সাহেব বাড়ির দুর্গাপূজা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর,টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ৩ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৭:১২, ৩ অক্টোবর ২০২২

মির্জাপুরে প্রধান আকর্ষণ সাহেব বাড়ির দুর্গাপূজা

সাহেব বাড়ির দুর্গাপূজা

মির্জাপুরে আজও অটুট রয়েছে সাহেব বাড়ির দুর্গাপূজার আকর্ষণ। সাহেব বাড়ির দুর্গাপূজা উপভোগ না করলে পূজার আনন্দ যেন অপূর্ণই থেকে যায়। শুধু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই হাজার হাজার দর্শনার্থী মন্ডপটিতে ভীড় করেন না প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণও এই মন্দিরে ভীড় করেন পূজা উপভোগ করতে। 

সাহেব বাড়ির পূজা বলতে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার বাড়ির দুর্গাপূজাকে বুঝায়। অত্র এলাকার মানুষ এই পূজাটিকে সাহেব বাড়ির পূজা নামে আখ্যায়িত করতেন। প্রবীণদের কাছে এখনও পূজাটি সাহেব বাড়ির পূজা হিসেবেই পরিচিত।

জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৩শ বছর আগে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার শরিকরা মিলে পাটখড়ি দিয়ে তৈরী একটি মন্ডপে দুর্গাপূজা করতেন। ১৯৪২ সাল থেকে মন্ডপটিতে জাগজমকভাবে পূজা শুরু করেন দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। পূজার সময় প্রতিবছর মন্ডপের পশ্চিম পাশে মাঠে লঙ্গরখানা খুলে হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াতেন তিনি। ১৯৫২ সাল থেকে পূজা উপলক্ষে মন্ডপটি থেকে শত শত দরিদ্র মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করতেন দানবীর রণদা। ১২ জোড়া ঢাকির তালে চলতো পূজার্চনা। পাশে তৈরী ৬০ ফুট উঁচু নহবতখানা থেকে বাজানো হতো সানাইয়ের সুর। পূজাকে ঘিরে সপ্তাহব্যাপী চলতো দেশের নামীদামী কোম্পানীর দলের যাত্রাপালা।

 ১৯৭১ সালে ৭ মে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে ধরে নিয়ে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে হত্যা করে। এরপর থেকে বেশ কয়েক বছর রণদা প্রসাদ সাহার পূজা মন্ডপের জৌলুসতা কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে রণদা দুর্গা মন্ডপের মৌলিকত্ব ও  ঐতিহ্য এখনও অটুট রেখেছে কুমুদিনী পরিবার। 

এখনো অত্র অঞ্চলের মানুষের প্রধান আকর্ষণ হলো দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার বাড়ির দুর্গাপূজা। অন্য বছরের মত এবারও লৌহজং নদী ঘেষা এই বাড়িটিতে সেত পাথরের মন্দিরে মহা ধুমধামে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
 
সোমবার মহাঅষ্টমীর দিন পূজা চলাকালে দেখা গেছে কুমুদিনী পরিবারের সদস্য ছাড়াও শত শত দর্শনার্থী  ভীড় করছেন পূজা মন্ডপটিতে। মন্ডপ সংলগ্ন লৌহজং নদীতে নিজস্ব দুইটি রঙিন বজরা দিয়ে কুমুদিনী পরিবারের সদস্য ছাড়াও দেশী বিদেশী দর্শনার্থীদের পারাপার করছেন মাঝিরা। পাশে নদীর ধারে উচুঁ নহবতখানা থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের সুমধুর সুর।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায় বলেন, তৎকালে গ্রামের মানুষ রণদা প্রসাদ সাহাকে রণদা সাহেব বলতেন। দুর্গাপূজার সময়ও তাঁরা সাহেব বাড়ির পূজা বলতেন বলে তিনি জানান।

 মির্জাপুরে এবছর ২৫৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ১১টি পূজা বৃদ্ধি পেয়ে অন্য বছরের মত টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে এবারও মির্জাপুরে সর্বাধিক মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মির্জাপুরে এবার প্রতিটি মন্ডপেই বেশ জাগজমকভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মির্জাপুর উপজেলা শাখার আহবায়ক সুরঞ্জন শেঠ তাপস বলেন, বছর ঘুরে সময়টি সামনে এলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে নতুন করে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এবছরও সেই উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে আয়োজকরা দুর্গাপূজা করছেন। দেশের উপজেলাগুলোর মধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় সর্বাধিক ২৫৬ মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে বলে তিনি জানান। 

 
    
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×