বিনামূল্যে সেচ সুবিধায় খুশি হাজারো কৃষক
বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যখন সেচ খরচ নিয়ে অনেকেই হতাশ তখন কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমন ধানের জমিতে সম্পূরক সেচ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও জেলা।
কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার মাটি উর্বর হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় যে কোন ফসল উৎপাদন হয় বেশি। ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আখসহ সব ধরনের ফসলের আবাদ বেশ ভাল হয় এখানে।
কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ঠাকুরগাঁওয়ে এবার উল্টো চিত্র দেখা দেয়। কৃষক সময়মতো আমন ধান রোপণ করতে না পারলে ধানের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছিল জেলা কৃষি অধিদফতর।
আমন মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছিল কৃষক। তবে সে দুশ্চিন্তা থেকে অনেক কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমন ধানের জমিতে সম্পূরক সেচের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও জেলা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়িত ভুল্লি বাঁধ সেচ প্রকল্পের আট শ’ হেক্টর, টাংগন বাঁধ সেচ প্রকল্পের চার হাজার চার শ’ ৫০ হেক্টর, বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্পের এক হাজার সাত শ’ ২০হেক্টর জমিসহ জেলার সকল সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ১১হাজার ছয় শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে সম্পূরক সেচ প্রদানের উদ্যাগ গ্রহণ করেছে পাউবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-প্রধান সম্প্রসারণ অফিসার রফিউল বারী বলেন, পাউবোর এই উদ্যোগের মাধ্যমে ১১ হাজার ছয় শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে ৫৮ হাজার দুই শ’ ৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হবে, যার মূল্য প্রায় একশ’ ১৫ কোটি টাকা।
এতে আনুমানিক ৮১ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। জেলা অফিসের আওতায় ৮৯টি কৃষক পানি ব্যবস্থাপনা দল রয়েছে। এতে ভূল্লী বাঁধ সেচ প্রকল্পের এক হাজার, টাংগন বাঁধে ছয় হাজার ও বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পে দুই হাজার কৃষক সুবিধা পাচ্ছেন।
বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, যে পরিমাণ বৃষ্টি দরকার ছিল তা পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমে চলছে খরা। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত সেচ খরচের চিন্তায় হতাশ ছিলাম। এ সময় পাউবোর সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমনের জমিতে পানি দিতে পেরে ভাল ফসল হবে আশা করছি। হতাশাও দূর হয়েছে আমাদের।
ভূল্লি বাঁধ সেচ প্রকল্পের সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের বাঁধের আওতায় এক হাজার কৃষক সম্পূরক সেচ পাচ্ছেন। আমরা আমন ধান নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। আর এবার বৃষ্টি নেই। ভূল্লী বাঁধের সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমিও স্থানীয় অনেক কৃষক আমনের জমিতে সেচ দিতে পারছেন।
জেলার টাংগন, বুড়ি ও ভূল্লি বাঁধ সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, আমন জমিতে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা দারুণভাবে লাভবান হচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-প্রধান সম্প্রসারণ অফিসার রফিউল বারী বলেন, আমরা সব সময় কৃষকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। খরা মোকাবেলায় আমরা আমন ধানের জমিতে সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করছি এর মাধ্যমে কৃষক কৃষিতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।