
ইয়াঙ্গুনে মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার আনন্দ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের
‘র্যাঙ্কিংয়ে যোজন যোজন পথ এগিয়ে থাকা মিয়ানমার খেলেছে নিজেদের মাঠে। গ্যালারিতে দর্শক সমর্থন নিয়ে। এমন একটা ম্যাচে আমাদের মেয়েরা ইতিহাস গড়ল। এক কথায় অসাধারণ।’ বলছিলেন কিংবদন্তির ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। জাহিদ হাসান এমিলিরও প্রায় একই অনুভূতি। মেয়েদের পাশাপাশি সাবেক অধিনায়ক প্রশংসা করেছেন কোচ পিটার বাটলার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও (বাফুফে)।
ইয়াঙ্গুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে বাহরাইনাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর নারী ফুটবলে এই অঞ্চলের অন্যতম পরাশক্তি মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মূল মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে আফঈদা খাতুনের দল। জোড়া গোলে ম্যাচটা স্মরণীয় করে রেখেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। মেয়েদের অনন্য এ অর্জনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর দিগি¦জয়ী বঙ্গ কন্যারা বলছেন শনিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিকের পরই উদ্যাপন করতে চায় তারা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়েছে,‘ইয়াঙ্গুনে নারী ফুটবল দল অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে। তাদের এই সাফল্য দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে এবং তাদের এই অসামান্য অর্জনকে আমরা সবাই কুর্নিশ জানাই। বিশেষ করে, তারা যে দৃঢ় সংকল্প, একাগ্রতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তাদের এই সাফল্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
নারী ফুটবল দলের এই অর্জন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল বয়ে আনবে বলে আশা করি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমার ৫৫তম স্থানে, বাংলাদেশ ১২৮ নম্বরে। অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ৭৩ ধাপ। এর আগে এই মাঠেই ২০১৮ সালে অলিম্পিক বাছাইপর্বে ৫-০ গোলে মিয়ানমারের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সেসব পরিসংখ্যান পেছনে ফেলেছে আফঈদা খন্দকারের নেতৃত্বাধীন দলটি।
জোড়া গোলে স্মরণীয় জয়ের কারিগর ঋতুপর্ণার বক্তব্য,‘প্রথমেই বলব, আমরা বাংলাদেশ থেকে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি, ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার। আমরা আমাদের...যার যার পারফরম্যান্স, তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং সে অনুযায়ী ফল পেয়েছি। সমর্থকদের বলব, সমর্থন করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এখন যেভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, আগামীতেও একইভাবে সমর্থন দিয়ে যান।’ এই সফরের ঠিক আগে সাবিনা খাতুনসহ বেশ কয়েক সিনিয়র ফুটবলার প্রকাশ্যে কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এরপর তাদের অনেককে বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে এলো ঐতিহাসিক এ সাফল্য।
কঠিন সময়ে বাটলারের দৃঢ় মানসিকতা এবং বাফুফেকে তার পাশে থাকার প্রশংসা করেছেন এমিলি। সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে মেয়েদের এই অর্জন ফুটবলের সার্বিক চিত্র বদলে দিতে পারে। কারণ এশিয়া কাপে ভালো করলে সুযোগ থাকবে বিশ্বকাপে খেলার। এজন্য এখনই পরিকল্পনা সাজাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে অংশ নেবে ১২টি দল। স্বাগতিকসহ ইতোমধ্যে চারটি দল পেয়ে গেছে মূল পর্বের টিকিট।
বাকি দলগুলো হলো ২০২২ সালে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন চীন, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় স্থান পাওয়া জাপান। মূল মঞ্চে তাদের সঙ্গী হবে বাছাইপর্বের আটটি গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ আটটি দল। বাংলাদেশই যেখানে প্রথম দল হিসেবে তাদের সঙ্গী হয়েছে। ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চূড়ান্ত পর্ব কাজ করবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব হিসেবেও। মেয়েদের এশিয়ান কাপ প্রথম শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রথম ২০ আসরে খেলেছে ২২টি দল।
বাংলাদেশ সুযোগ পেল ২৩তম দল হিসেবে। ২০২৬ নারী এশিয়ান কাপটা ২০২৭ নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও কাজ করবে। ২০২৭ সালে নারী বিশ্বকাপ হবে ব্রাজিলে। এশিয়া থেকে সরাসরি ৬টি দল ও আন্তঃমহাদেশীয় প্লে অফ খেলে সুযোগ পেতে পারে আরও দুটি দল। সেমিফাইনালে ওঠা চার দল সরাসরি সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া চার দল দুটি প্লে ইন ম্যাচে মুখোমুখি হবে। জয়ী দুই দল পেয়ে যাবে বিশ্বকাপের টিকিট। হেরে যাওয়া দুই দল যাবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে অফে। দুরন্ত-দুর্বার আফঈদা, ঋতুপর্ণাদের ঘিরে এবার আরও বড় স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ। আসলাম-এমিলদের পরামর্শ সিরিয়াসলি পরিকল্পনাটা নিতে হবে এখন থেকেই।