
মেসি
সুপারস্টার লিওনেল মেসি ক্যারিয়ারে আরাধ্য বিশ্বকাপ জিতেছেন ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কিন্তু আর্জেন্টিনার ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের পথে বিতর্কও কম ছিল না। আসরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে তিন যুগের অপেক্ষা শেষ হয় আলবিসেলেস্তাদের। এর মধ্যে অন্যতম বড় বিতর্ক কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে ডাচদের হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে আর্জেন্টিনা।
নির্ধারিত ও অতিরিক্ত মিলিয়ে ১২০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকে। ওই সময়ে হল্যান্ডের ফুটবলারদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হিংসাত্মক আচরণ অনেক সমালোচনার জন্ম দেয়। তখন ওসব ঘটনা স্বীকার না করলেও বিশ্বকাপ জয়ের প্রায় দেড় মাস পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক অনকাক্সিক্ষত ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শেষ আটের হল্যান্ড-আর্জেন্টিনা ম্যাচ ছিল বিতর্কে ভরপুর। বিশেষ করে রেফারির মাত্রাতিরিক্ত হলুদ কার্ড প্রদর্শন সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। পাশাপাশি দুই দলের ফুটবলাররা কয়েকবার মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান। ঘটনাবহুল ওই ম্যাচের শেষে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা অনেকটা অসভ্য আচরণ প্রদর্শন করেন। মেসির মতো ফুটবলারও ডাচ কোচ লুইস ভ্যান গালের মতো ভদ্র কোচের সামনে গিয়ে আঙুল তুলে কথা বলেন।
শুধু তাই নয়, ৭৩ মিনিটে মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করার পর ভ্যান গালের সামনে গিয়ে তাকে ইঙ্গিত করে, দুই হাত কানের কাছে তুলে নিয়ে বাজে উদযাপন করেন। এমন আচরণের জন্য তখন থেকেই সমালোচিত হতে থাকেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। কিন্তু তখন উল্টো মেসি অভিযোগ করেন, ম্যাচ শুরুর আগে কথা বলতে গিয়ে আর্জেন্টিনাকে নাকি অসম্মান করেছিলেন ডাচ কোচ।
অবশেষে ভুল বুঝতে পেরেছেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি।
এক সাক্ষাৎকারে ফরাসি ক্লাব পিএসজির তারকা এই ফরোয়ার্ড বলেন, আমি জানি ভ্যান গাল কি বলেছিলেন। তবে গোল উদযাপনের সেই ঘটনাটি ওই মুহূর্তে ঘটে গিয়েছিল। যা আমি করেছি তা কোনোভাবেই নিজে থেকে পছন্দ করি না। এমনকি যা ঘটেছে তার পরও পছন্দ করছি না। ওটা ছিল ওই মুহূর্তের ¯œায়ুচাপের ফসল। যা দ্রুতই ঘটে গিয়েছিল। ওই ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দেখা গিয়েছিল, লুইস ভ্যান গালের সঙ্গে কোনো একটি বিষয় নিয়ে আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলছেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন আর্জেন্টিনার সহকারী কোচ এডগার ডেভিডস।
ম্যাচের পর আরেকটি অভিযোগ সামনে এসেছিল। যেখানে ৮৩ ও (৯০+১১) মিনিটে দুই গোল করে হল্যান্ডকে সমতায় ফেরানো ওয়াট ওয়েগহোর্স্টের সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করেছিলেন মেসি। ম্যাচের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়েগহোর্স্ট দাবি করেন, ম্যাচের পর তিনি মেসির সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু মেসি তখন তাকে এড়িয়ে যান। বিষয়টা দাঁড়িয়ে যখন তিনি দেখছিলেন, তখন মেসি তাকে বলেছিলেন, ‘বোকা, তুমি কি দেখছো এভাবে, যাও এখান থেকে।’
অবশেষে এসব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন মেসি। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের সুখস্মৃতিও রোমান্থন করেছেন এলএমটেন। কাতার বিশ^কাপের ফাইনালে ফ্রান্সকেও টাইব্রেকারে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। সুখের এই স্মৃতি নিয়ে আবেগি ভাষায় মেসি বলেন, শিরোপাটি যেন আমাকে ডাকছিল। সুন্দর একটি স্টেডিয়ামে বিশ^কাপ শিরোপা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। আমি ওটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো দ্বিধা করিনি। যাওয়ার সময় ইচ্ছা করেই চুমু খাই। তখন যেন আমাকে বলছিল, আসো, এটা হাতে নাও। এখন তুমি আমাকে স্পর্শ করতে পারো। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঈশ^র আমাকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন।
১৯৮৬ সালে সবশেষ দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মেসি উপহার দিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় শিরোপা।
এ প্রসঙ্গে খুদে জাদুকর বলেন, ম্যারাডোনার হাত থেকে ট্রফিটি পেলে আরও বেশি খুশি হতাম, ভালো লাগত। তিনিও আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় দেখতে পেতেন। তবে উপর থেকে তিনি আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন। ম্যারাডোনা এবং আমাকে আরও যারা ভালোবাসেন তাদের কারণেই আমি শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।