ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের সংবাদপত্র এবং জন্মভূমি

মোস্তফা সেলিম

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের সংবাদপত্র এবং জন্মভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সংবাদপত্

মুক্তাঙ্গন থেকে প্রকাশিত শীর্ষ পত্রিকাদের একটি সাপ্তাহিক জন্মভূমি। ৮ নভেম্বর জন্মভূমির পূর্ণপৃষ্ঠা জুড়ে শিরোনাম ছিল ‘ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ অবশ্যই স্বাধীন হচ্ছে।’ জন্মভূমির রাজনৈতিক ভাষ্যকারের আগাম তথ্যটি পরিবেশনের পর অস্থায়ী সরকারের শীর্ষমহলের সঙ্গে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। সম্পাদক মোস্তাফা আল্লামা এই নিবন্ধকারকে জানিয়েছিলেন, এজন্য প্রবাসী সরকার তাঁকে ডেকে পাঠায় এবং এরকম হঠকারিতামূলক সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করে। দেশ ঠিকই ডিসেম্বরে স্বাধীন হয়।

জন্মভূমি ছিল এমনই এক সংবাদপত্র, যার ছিল সেই দূরদর্শিতা। পত্রিকাটি ছিল উঁচুমানের এবং নির্ভরযোগ্য। আল্লামা সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর বিচক্ষণতা এবং দূরদৃষ্টির প্রমাণ মেলে পত্রিকার পাতায়-পাতায়। অবরুদ্ধ, বিপদসংকুল এবং বৈরী পরিবেশেও পত্রিকাটির প্রতিটি সংবাদভাষ্য ইত্যাদি ছিল পেশাদারিত্বের অনুপম উদাহরণ।

বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে প্রবাসীদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করার জন্য কয়েকবার ভ্রমণ করেন মোস্তাফা আল্লামা। এই ত্যাগী সাংবাদিক এবং সংগঠক মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের পূর্বে কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উনিশ শতকের কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭) ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ প্রশ্ন তুলে আত্মমগ্ন বাঙালির চেতনায় করাঘাত যেমন করেছেন, ঠিক তেমনি শতসহ¯্র গানে, কবিতায়, লেখায় বাঙালিকে মুক্তির পথে ধাবিত করেছেন এ দেশের কবি-সাহিত্যিকেরা। সাংবাদিকসমাজও পালন করেছেন দেশপ্রেমের সমুজ্জ্বল ভূমিকা।

স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ যে লড়াই-সংগ্রামের পরিক্রমা তাকে এগিয়ে নিয়েছে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকসমাজ। এজন্য রক্তচক্ষু, জেল-গারদ, জুলুম-নির্যাতন সবরকম নিগ্রহের শিকার হয়েও তারা বিচ্যুত হননি। মুক্তিকামী বাংলার মানুষের আবেগ এবং স্বপ্নের সঙ্গে একাকার হয়ে তারা লিখেছেন সংবাদ, সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সংবাদপত্রগুলোই ছিল মূলত তথ্য প্রদানের বিশ^স্ত এবং বড় মাধ্যম। বেতার ছিল বটে তবে তা ছিল সীমিত।

টেলিভিশন তো নগরের কিছু বাড়ির বৈঠকখানা শৌখিন বস্তুই ছিল। জাতিকে প্রস্তুত করতে, আন্দোলন-সংগ্রামের খবর প্রান্তিক জনপদে ছড়িয়ে দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সংবাদপত্র-সাংবাদিকগণ ছিলেন অকুতোভয়, আপোসহীন।
পাকিস্তানিদের আক্রমণের মুখে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। গণযুদ্ধ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকসমাজও যুদ্ধের খবরাখবর প্রদান করে দেশের এবং বিদেশের মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা, নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের খবর জানানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে যেসব সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল, তারা ছিলেন প্রায়-অবরুদ্ধ পরিবেশে। ফলে দরকার পড়েছিল মুক্তাঞ্চল থেকে পত্রিকা প্রকাশের।

সেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাহসী এবং প্রত্যয়দীপ্ত কিছু দেশপ্রেমিক সাংবাদিক। জানা যায়, এ রকম উদ্যোগের সংখ্যা ষাটের চেয়েও বেশি ছিল। মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা হলো সাপ্তাহিক জয় বাংলা (আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী), অগ্রদূত (আজিজুল হক), জাগ্রত বাংলা (এস এ কালাম), বাংলাদেশ (মিজানুর রহমান), বিপ্লবী বাংলাদেশ (নুরুল আলম ফরিদ), মুক্তিযুদ্ধ (বেনামে প্রকাশিত), রণাঙ্গন রণদূত (ছদ্মনাম), অভিযান (সিকানদার আবু জাফর), বঙ্গবাসী (কে এম হোসেন), স্বদেশ (গোলাম সাবদার সিদ্দিকী), স্বাধীন বাংলা (সামছুল আলম দুদু), সোনার বাংলা (সরকার কবীর), দাবানল (মো. জিনাত আলী), বাংলার মুখ (সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী), বাংলার বাণী (আমির হোসেন), মুক্তবাংলা (আবুল হাসনাত সা’দত খান ও আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম), সাপ্তাহিক বাংলা (মাইকেল দত্ত), প্রতিনিধি (আহমদ ফরিদউদ্দিন), মুক্তি (শরফুদ্দিন আহমেদ), সংগ্রামী বাংলা (আবদুর রহমান সিদ্দিক), দেশবাংলা (ফেরদৌস আহমদ কোরেশী), আমার দেশ (খাজা আহমদ), সাপ্তাহিক আমোদ (মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী) ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রণাঙ্গন থেকে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহকে প্রকাশের, মুদ্রণের ধরনভেদে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। কিছু কাগজ হাতে লিখে ফটোকপিয়ারে প্রতিলিপি করে প্রকাশ হতো, অন্যগুলো সাইক্লোস্টাইলে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলো মুদ্রিত হয়েছে। জন্মভূমি মুদ্রিত পত্রিকা। ট্যাবলয়েড সাইজের বাইকালার পত্রিকাটি ৮-১২ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে। মূল্য ৩০ পয়সা। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় নিয়মিত প্রকাশিত জন্মভূমি পত্রিকা দুই রঙে ৮ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে বেশি, তবে একটি বিশেষ সংখ্যা ১২ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল।

লাল ও কালো- এই দুই রঙে ছাপা হয়েছে পত্রিকাটি। জন্মভূমির ব্যানারহেডে সাপ্তাহিক লেখা থাকলেও এর ব্যত্যয় হয়েছে মাঝেমধ্যে। উদ্বোধনী সংখ্যা থেকে পঞ্চম সংখ্যার পর দীর্ঘ পাঁচ মাস বিরতির পর এর ষষ্ঠ সংখ্যা প্রকাশিত হয় রণাঙ্গন থেকে। পত্রিকাটির স্লোগান ছিল ‘বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিপ্লবী মুখপত্র’। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে জন্মভূমির অবস্থান প্রথম সারিতে। কেউ কেউ জয় বাংলা পত্রিকার পর এর স্থান দিতে চেয়েছেন।
একাত্তর সালে যখন স্বাধীনতা-প্রসববেদনা-কাতর-জননী বাংলাদেশ তখন মোস্তাফা আল্লামা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন সাপ্তাহিক জন্মভূমি। তবে কত তারিখে জন্মভূমির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর হদিস মেলেনি। এমনকি আল্লামার লেখাতেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। কোনো কোনো গবেষক জানুয়ারি মাসে এটি চালু হয়েছিল জানিয়েছেন তাঁদের লেখায়। কিন্তু তাঁদের লেখায় কোনো তথ্যসূত্র নেই।
আল্লামা এই নিবন্ধকারের হাতে যে কপি তুলে দিয়েছেন এবং তাঁর কাগজপত্র ঘেঁটে এর চেয়ে বেশি কোনো সংখ্যা আমরা পাইনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে প্রকাশিত পাঁচটি সংখ্যা ছাড়া প্রায় সব সংখ্যাই আমাদের হাতে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে প্রকাশিত সংখ্যা বিষয়ে তাঁর ভাই অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া আল্লামার মতো হলো- যুদ্ধের শুরুতে তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলেট বোর্ডিংয়ে পাকিস্তানি আর্মি হানা দেয়।

তাঁর বাবা মো. আতাউর রহমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে কয়েক মাস জেলে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। মোস্তাফা আল্লামা ওখানেই অফিস করতেন। সম্ভবত ওই সময়ে তাঁর অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে শুরুর দিকের সংখ্যাগুলো হারিয়ে যায় অথবা পাকিস্তানিরা ধ্বংস করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত সংবাদপত্রের একটি তালিকা পাওয়া যায় মোট ষোলো খণ্ডে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রের ষষ্ঠ খণ্ডে। এই খ-টির উপশিরোনাম হলো ‘মুজিবনগর : গণমাধ্যম’ (সম্পাদক: হাসান হাফিজুর রহমান, প্রকাশক তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। প্রকাশকাল : নভেম্বর ১৯৮২)। এই খণ্ডের ২৭৪-২৮২ পৃষ্ঠায় জন্মভূমি পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যার (৬ সেপ্টেম্বর, ১৩ সেপ্টেম্বর, ৬ ডিসেম্বর) ৭টি প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।

এই পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে লেখা রয়েছে: ‘জন্মভূমি। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিপ্লবী মুখপত্র। সম্পাদক মোস্তাফা আল্লামা। জন্মভূমি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক রবীন্দ্র এভিনিউ, মুজিব নগর, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত। বিদেশস্থ প্রধান যোগাযোগ অফিস: ৩৩/২ শশীভূষণ দে স্ট্রিট, কলকাতা-১২।’ ওখানেও এর উদ্বোধনী প্রকাশনা এবং সর্বশেষ প্রকাশনা সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই।

আমাদের সংগ্রহেও ৬ ডিসেম্বরের পর কোনো সংখ্যা নেই। আমরা স্থিরভারে নিশ্চিত যে ৬ ডিসেম্বর সংখ্যাটি ছিল এই পত্রিকার সমাপনী সংখ্যা। কারণ পত্রিকাটি ৭-১০ দিন অন্তর-অন্তর প্রকাশিত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বরের মাত্র ১০ দিন পর হানাদারমুক্ত হয় বাংলাদেশ। ফলে এই পত্রিকা প্রকাশের আর কোনো দরকার ছিল না বলেই সম্পাদক হয়ত মনে করেছেন।
জন্মভূমি প্রায় একাই চালাতেন আল্লামা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর একান্ত সচিবের কঠিন দায়িত্ব পালনের সঙ্গে তিনি এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। পারিবারিক উৎস হতে প্রাপ্ত আয় থেকে পত্রিকাটি প্রকাশের খরচ চালাতেন মোস্তাফা আল্লামা। জন্মভূমি পত্রিকায় গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী আল্লামা, বি সরকার, নিয়াজ মোহাম্মদ, সি.এম. গোলাম কিবরিয়া আল্লামা প্রমুখ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত জন্মভূমি পত্রিকার প্রচারসংখ্যা অন্যান্য কাগজ থেকে ঢের বেশি ছিল। প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কপি ছাপা হতো (সূূত্র : মোস্তাফা আল্লামার একটি অপ্রকাশিত লেখা)। বিনামূল্যে পত্রিকাটি বিতরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের শরণার্থী এবং অবরুদ্ধ মানুষের মধ্যে; মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী এবং দেশী-বিদেশী মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক পত্রপত্রিকা-রেডিও-টেলিভিশনের প্রতিনিধির মধ্যে। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে জন্মভূমি পত্রিকায় প্রকাশিত হেডিং ‘বিশ্ববাসী রুখে দাঁড়াও’, ’৭১ সালের ৮ নভেম্বরের হেডিং ছিল ‘ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে’, ‘ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অগ্রগতি’, ‘স্বীকৃতির অপেক্ষা আর কতকাল’।
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ দলিল এই পত্রিকাটির কোনো কপি বাংলাদেশে কোথাও সংরক্ষিত নেই অনুমান করার পর নানা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, আর্কাইভে সরেজমিনে এই নিবন্ধের লেখক অনুুসন্ধান করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক পত্রিকার সংগ্রহ নেই বললেই চলে। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ মিয়া জানান, ‘পত্রিকাটির কোনো সংগ্রহ তাঁদের ওখানে নেই।

এমনকি মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত জয় বাংলা পত্রিকাটির একটি কপি ছাড়া অন্য কোনো পত্রিকা, সাময়িকীর কোনো সংগ্রহ তাঁদের নিকট নেই’ (সূত্র: মো. ইলিয়াছ মিয়া, গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভ, সাক্ষাৎকার: তারিখ ২৫.৪.২০২২, সময় ২:২৭ মিনিট)। তুলনায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহ সমৃদ্ধ। আর্কাইভের কর্মকর্তা ড. রেজিনা বেগমের সঙ্গে আলাপচারিতার শুরুতেই তিনি জন্মভূমি তাঁদের ওখানে নেই নিশ্চিত করলেন ‘৯৯.৯৯ শতাংশ নিশ্চিত’ বলে।

তারপরও তাঁদের সংরক্ষিত আর্কাইভে প্রবেশের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রতিলিপি সংস্করণগুলো ঘেঁটে রেজিনা বেগমের ৯৯.৯৯ ভাগকে শতভাগে নিশ্চিত হলাম যে সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ কাগজটি নেই। এমনকি জন্মভূমির কোনো রেফারেন্স কোথাও মিলল না। তবে ওই জাদুঘরে ভিন্ন কিছু পত্রিকা- এগুলোর মধ্যে রণাঙ্গন থেকে প্রকাশিত পত্রিকা, দেশে-বিদেশে পত্রিকার ছোটখাটো সংগ্রহের দেখা মিলল। (সূত্র : ড. রেজিনা বেগম, গবেষণা কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সাক্ষাৎকার: তারিখ ১৫.৪.২০২২, সময় ৩:০০ মিনিট)। এছাড়াও সম্ভাব্য সকল স্থানেই আমি অনুসন্ধান চালিয়েছি। জাতীয় জাদুঘরসহ কোথাও পত্রিকার কোনো সংগ্রহ নেই।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর অধিকাংশই আমাদের জাতীয় মোহাফেজখানায় নেই। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পেরিয়েছে দেশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের সংখ্যাও ক্রমেই কমে আসছে। আরও কয়েক বছর পর সেই সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসবে। তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে এসব কাগজ। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদপত্র, দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থেই।

×