ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

AI কি মানুষের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে? নাকি কাজের ধরন বদলাচ্ছে?

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৪ জুলাই ২০২৫

AI কি মানুষের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে? নাকি কাজের ধরন বদলাচ্ছে?

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, AI মানুষের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, AI শুধু কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। আসলে কোনটা সত্যি? এর উত্তর সহজ নয়, কিন্তু বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলে দেখা যাবে AI চাকরি “খাচ্ছে” যেমন, তেমনি “নতুন কাজের সুযোগও তৈরি” করছে।

AI, বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হলো এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমনকি কাজও করতে পারে। আগে যেসব কাজ কেবল মানুষই করতে পারত, এখন সেই কাজগুলো AI অনেক দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করতে পারছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডেটা বিশ্লেষণ, কাস্টমার সার্ভিস, গ্রাফিক ডিজাইন, অনুবাদ, এমনকি কিছু লেখালেখির কাজও এখন AI দিয়ে করা যাচ্ছে।

এর ফলে যেসব কাজ খুব সহজ, নিয়মিত বা যান্ত্রিক ছিল, সেগুলোর চাহিদা কমে যাচ্ছে। যেমন— কল সেন্টারের চাকরি, ডেটা এন্ট্রি, সাধারণ অনুবাদ, টাইপিং, এমনকি কিছু রিপোর্ট তৈরির কাজ এখন AI দিয়ে করা সম্ভব। ফলে এসব ক্ষেত্রে অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন বা চাকরির সংখ্যা কমছে। এটা এক অর্থে বলা যায়, AI মানুষের কিছু কিছু চাকরি “খেয়ে নিচ্ছে”।

তবে এর উল্টো দিকও আছে। AI ব্যবহারের ফলে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যেমন— AI মডেল তৈরির জন্য প্রোগ্রামার, ডেটা অ্যানালিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, প্রম্পট ডিজাইনার ইত্যাদি নতুন নতুন পেশা গড়ে উঠছে। আগে এসব কাজের নামও অনেকেই জানতেন না। এছাড়া যেসব কাজ সৃজনশীলতা, মানবিকতা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে, সেসব কাজের গুরুত্ব বাড়ছে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, AI পুরোপুরি নিজে নিজে কাজ করতে পারে না। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ঠিকঠাক ব্যবহার করতে হয়, পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এ জন্য দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হয়। তাই বলা যায়, AI মানুষের প্রতিস্থাপন না হয়ে বরং মানুষের সহকারী হয়ে উঠছে।

এছাড়া AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব প্রতিষ্ঠান সময় ও খরচ বাঁচাতে পারছে, তারা সেই বেঁচে যাওয়া সম্পদ দিয়ে অন্য দিকেও বিনিয়োগ করছে। এতে করে নতুন পণ্যের উদ্ভাবন, গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি, বা নতুন প্রকল্পে নিয়োগ বাড়ছে। মানে, কাজের ধরন যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি চাকরির ধরনও নতুনভাবে রূপ নিচ্ছে।

তবে যেসব মানুষ পুরনো ধরনের কাজের উপর নির্ভরশীল, তারা সমস্যায় পড়ছেন। কারণ, তাদের সেই কাজ হয়তো এখন AI দিয়ে সহজেই করা যাচ্ছে। তাই এখন সময়ের দাবি হলো— নতুন দক্ষতা অর্জন করা। কারও জন্য AI হুমকি, আবার কারও জন্য এটা সুযোগ। যাঁরা নিজেদের আপডেট করছেন, নতুন কিছু শিখছেন, তাদের জন্য AI এক বড় সুযোগ হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও এর প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন AI ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকে এর মাধ্যমে ব্যবসা বাড়াচ্ছেন, আবার কেউ কেউ চাকরির অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। শিক্ষিত তরুণদের এখনই প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে। শুধু ডিগ্রি নয়, দরকার সময় উপযোগী স্কিল।

AI একদিকে কিছু চাকরি কমাচ্ছে, কিন্তু অন্যদিকে নতুন কাজের দরজা খুলে দিচ্ছে। কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে, এবং আমাদেরও সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। AI কে ভয় না পেয়ে, বরং তাকে কাজে লাগানোর কৌশল শিখতে হবে। তবেই ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে টিকে থাকা সম্ভব হবে।

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×