ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

পাকিস্তানে ২৫ বছর পর অফিস বন্ধ করল মাইক্রোসফট, কর্মী ছাঁটাইও সম্পন্ন

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ৫ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানে ২৫ বছর পর অফিস বন্ধ করল মাইক্রোসফট, কর্মী ছাঁটাইও সম্পন্ন

পাকিস্তানে ২৫ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির অফিস বন্ধ করে দিলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির অন্তত পাঁচজন কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন।

এই সিদ্ধান্তকে দেশটির প্রযুক্তি খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মাইক্রোসফটের পাকিস্তান অফিস বন্ধ হওয়ার খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কান্ট্রি হেড জাওয়াদ রেহমানের এক লিঙ্কডইন পোস্টের মাধ্যমে। তিনি জানান, "মাইক্রোসফট আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানে তার কার্যক্রম বন্ধ করেছে।"

ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে মাইক্রোসফটের কার্যক্রম অনেক আগেই বিদেশি অফিস ও স্থানীয় পার্টনারদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল। দেশটিতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কার্যক্রম সীমিত ছিল।

ডন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মাইক্রোসফটের একজন মুখপাত্র বলেন, "আমরা আমাদের গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাব শক্তিশালী ও বিস্তৃত পার্টনার সংগঠন এবং কাছাকাছি থাকা অন্যান্য মাইক্রোসফট অফিসের মাধ্যমে। আমরা বিশ্বের বহু দেশে সফলভাবে এই মডেল অনুসরণ করি।"

বিশ্লেষকদের মতে, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক কাঠামো পুনর্গঠনের অংশ। এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সফটওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস (SaaS) ভিত্তিক মডেলে রূপান্তরের কৌশল। চলতি সপ্তাহেই মাইক্রোসফট তাদের বৈশ্বিক কর্মীসংখ্যার চার শতাংশ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়, যা প্রায় ৯,০০০ কর্মীর সমান। মে মাসেও প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাঁটাই করেছিল।

পাকিস্তানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ প্রসঙ্গে ডনকে জানায়, বিষয়টিকে মাইক্রোসফটের ‘পাকিস্তান ত্যাগ’ হিসেবে না দেখে, বরং একটি ক্লাউডভিত্তিক ও পার্টনার-নির্ভর মডেলে রূপান্তর হিসেবে দেখা উচিত। কারণ, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পের পরিবর্তন এই দিকেই এগোচ্ছে।

টেক বিশেষজ্ঞ হাবিবুল্লাহ খান ডন-কে বলেন, "প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অন-প্রিমাইজ থেকে SaaS মডেলে সরে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় বাজারে শারীরিক উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। মাইক্রোসফটের পাকিস্তান অফিস বন্ধ হওয়া এই বৈশ্বিক পরিবর্তনেরই অংশ, যা দেশটির প্রযুক্তি খাতের প্রতি নেতিবাচক কোনো বার্তা নয়।"

ডন আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে Careem-এর মতো অন্যান্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও পাকিস্তানে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে বা সীমিত করছে। তবে হাবিবুল্লাহ খান স্পষ্ট করে বলেন, মাইক্রোসফটের সিদ্ধান্ত মূলত খরচ কমানো ও কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের জন্য, দেশটির প্রযুক্তি পরিবেশের জন্য তা অশনি সংকেত নয়।

পাকিস্তানে মাইক্রোসফটের অফিস বন্ধের এ সিদ্ধান্ত তাদের কর্মপদ্ধতির আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে দেখা হলেও, স্থানীয় প্রযুক্তি কর্মসংস্থানের ওপর এর প্রভাব অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতে দেশীয় প্রযুক্তি খাতের জন্য এই পরিবর্তন কী বার্তা বহন করবে, তা সময়ই বলে দেবে।

 


সূত্র:খালিজ টাইমস

আফরোজা

×