
ছবি: সংগ্রহীত
আপনি কি কখনও চ্যাটজিপিটিকে বলেছিলেন—‘১ থেকে ৫০-এর মধ্যে একটি সংখ্যা বেছে নাও’?
যদি বলেন, তবে সম্ভাবনা প্রবল যে, উত্তর এসেছে—২৭!
আর এটা শুধু একবারের ঘটনা নয়।
বিভিন্ন এআই মডেলেই বারবার ফিরে আসে এই রহস্যময় সংখ্যা—২৭।
চ্যাটজিপিটি থেকে শুরু করে জেমিনি, ক্লড—সবার মধ্যেই একই প্রবণতা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে এই অদ্ভুত রহস্য:
এআই কেন বারবার বেছে নিচ্ছে ২৭?
আসল রহস্যটা স্রেফ ‘র্যান্ডম’ নয়—আর এটা হয়তো আমাদের নিয়েই বেশি কিছু বলছে, এআইয়ের চেয়ে।
অপ্রত্যাশিত এক প্যাটার্ন
কিছু গবেষক আর ব্যবহারকারী সম্প্রতি বিভিন্ন এআই-চ্যাটবটের সঙ্গে সংখ্যা বাছাই নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন।
আর ফলাফল অবাক করার মতো—
কিছু মডেল যেমন LeChat মাঝেমধ্যে ৩৭ পছন্দ করে, ক্লড ঝুঁকে ৪২-এর দিকে—
তবু সবচেয়ে বেশি ঘুরে ফিরে আসে সেই ২৭, বিশেষ করে চ্যাটজিপিটিতে।
মিডিয়াম লেখক কার্তিকেয় সেঙ্গার প্রথম বিষয়টি চোখে আনেন,
নিজের লেখায় তিনি জানান—
“এটা স্রেফ কাকতালীয় নয়, সংখ্যাটা এত বেশি এসেছে যে সন্দেহ জাগতেই হয়।
এআইয়ে ২৭ সরাসরি প্রোগ্রাম করা নেই, কিন্তু কীভাবে যেন বারবার উঠে আসে।”
দোষটা কি আসলেই এআইয়ের?
তবে ভয়ের আগে মনে রাখা জরুরি,
এআই নিজের মন থেকে সংখ্যা বানায় না।
চ্যাটজিপিটির মতো মডেল তৈরি হয় বিশাল ডেটাসেট দিয়ে—
বই, ওয়েবসাইট, ফোরাম, মানুষের কথোপকথন—সবকিছু থেকে শেখে এগুলো।
অর্থাৎ, এসব প্যাটার্নের শিকড় আমাদের মধ্যেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা আসলে আমাদেরই মানসিক প্রতিফলন।
“এআই হলো ভবিষ্যদ্বাণীমূলক টুল।
যদি মানুষ সাধারণত ২৭ বেছে নেয়, মডেলটাও সেটা শিখে ফেলে,”
বলছেন এক এআই গবেষক, যিনি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল নিয়ে কাজ করেন।
“এই আউটপুট মূলত আমাদেরই প্রতিচ্ছবি।”
কেন ২৭?
কিন্তু ২৭ কেন? এটা তো গোল সংখ্যা নয়,
নয় ১ থেকে ৫০-এর মধ্যবর্তী কোনো গুরুত্বপূর্ণ সীমা।
কিন্তু অবাক করার মতোভাবে ২৭-এর রয়েছে বিস্ময়কর প্রভাব—
বিজ্ঞান থেকে পপ কালচার পর্যন্ত।
উদাহরণস্বরূপ, চাঁদকে পৃথিবী ঘুরতে লাগে প্রায় ২৭ দিন।
আমাদের ত্বক নতুন কোষ তৈরি করে প্রতি ২৭ দিনে।
নিউমারোলজিতে ২৭-কে ধরা হয় ‘আধ্যাত্মিক শক্তির সংখ্যা’ হিসেবে।
আর আছে ভয়ংকর ‘২৭ ক্লাব’—
অ্যামি ওয়াইনহাউস, কার্ট কোবেইন, জিমি হেন্ডরিক্সের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা মারা গেছেন ঠিক ২৭ বছর বয়সে।
এসব অর্থবহ ঘটনা হয়তো সংখ্যাটিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করেছে,
আর সেই মাধ্যমেই ডেটাসেটে ২৭-এর উপস্থিতি বেড়েছে।
এআইয়ের পছন্দের সংখ্যা আসলে আমাদেরই গল্প বলে
এই অদ্ভুত সংখ্যাটি আসলে আমাদেরই এক অদৃশ্য অভ্যাস উন্মোচন করছে।
পরেরবার যদি এআই আবার ২৭ বলে, ভয় পাবেন না—
এটা এআইয়ের অশরীরী পছন্দ নয়,
বরং আমাদের অজান্তেই আমরা নিজেরাই সেটি গেঁথে দিয়েছি।
এটাই প্রমাণ করে, মানুষের মস্তিষ্ক আর মেশিন লার্নিংয়ের সম্পর্ক কত জটিল আর অদ্ভুত।
তাই হ্যাঁ, চ্যাটজিপিটি হয়তো ২৭-এ ‘অবসেসড’!
কিন্তু সত্যি বলতে… হয়তো আমরাও সেই পছন্দে নীরবে সায় দিয়েই চলেছি।
আবির