
ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ায় মাকড়সাকে ভয়ংকর প্রাণী হিসেবে মনে করা হলেও, এখন সেই মাকড়সার বিষ থেকেই তৈরি হচ্ছে জীবন বাঁচানোর অ্যান্টিভেনম বা বিষপ্রতিরোধী ওষুধ।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অ্যান্টিভেনম প্রোগ্রামের আওতায় চলছে এই গবেষণা। সিডনির আশপাশে পাওয়া ফানেল-ওয়েব প্রজাতির মাকড়সা থেকে বিষ সংগ্রহ করে তৈরি করা হচ্ছে এই প্রতিকার।
নিউ সাউথ ওয়েলসের অস্ট্রেলিয়ান রেপটাইল পার্কে বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন গড়ে ৮০টি মাকড়সা থেকে বিষ সংগ্রহ করেন। গবেষক এমা টেনি জানান, ‘সিডনি ফানেল-ওয়েব সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক মাকড়সা।’
এই মাকড়সার কামড়ে মাত্র ১৩ মিনিটেই মানুষ মারা যেতে পারে। গড় হিসেবে মৃত্যুর সময়সীমা ৭৬ মিনিট। তবে দ্রুত চিকিৎসা পেলে অনেকেই প্রাণে বাঁচেন।
মারাত্মক কামড়ের প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে ১৯৮১ সাল থেকেই শুরু হয় অ্যান্টিভেনম প্রোগ্রাম। এতে সাধারণ মানুষও যুক্ত আছেন। তারা মাকড়সা ও তাদের ডিমের থলি পার্কে জমা দেন।
সপ্তাহে একবার বিজ্ঞানীরা একটি ভ্যানে করে সিডনির বিভিন্ন এলাকা থেকে মাকড়সা সংগ্রহ করেন।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ফানেল-ওয়েব মাকড়সার বিষ দুই কারণে ভয়ানক— এক, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী; দুই, এরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকে।
এদের মধ্যে পুরুষ মাকড়সা স্ত্রীদের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ বেশি বিষাক্ত। অ্যান্টিভেনম তৈরির ক্ষেত্রে তাই পুরুষ মাকড়সার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বিষ সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ২০০টি মাকড়সা থেকে এক শিশি অ্যান্টিভেনম তৈরি সম্ভব। এই অ্যান্টিভেনম তৈরিতে খরগোশ ব্যবহার করা হয়। কারণ, খরগোশ প্রাকৃতিকভাবে বিষ প্রতিরোধে সক্ষম।
বিজ্ঞানীরা খরগোশের শরীরে ধীরে ধীরে বিষের মাত্রা বাড়িয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করেন। এতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। অবশেষে খরগোশের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে তাতে থাকা অ্যান্টিবডিকে বোতলজাত করা হয়।
এই অ্যান্টিভেনম এখন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা প্রতিদিন অসংখ্য জীবন বাঁচাচ্ছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব