
ছবি: জনকণ্ঠ
স্বৈরচার শেখ হাসিনার পতনের পরে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে নানা সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার আন্দোলন শুরু হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
ঢাকা কলেজ এড়িয়ে থেকে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ে মিছিল নিয়ে আসে। অপরদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সহপাঠীদের হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এই দু’স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই ৬টি দাবি নিয়ে আন্দোলন শুর করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইলস্টোনে বাড়তে থাকে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের পদচারণা। বহিরাগতদের অধিকাংশেরই ছিল না আইডি কার্ড। বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের ভেতরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক। সরকার প্রতিটি দাবি মেনে নেবে। তারপরও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের একটা অংশ জিম্মি করে রাখে উপদেষ্টাদের।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কৌশলে ছাত্রলীগ নেতারা নিজেদের কব্জায় নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রদেরকে দিয়াবাড়ীতে মার পিট করে আহত করছে। এদের মধ্যে পূর্ব থানার জুলাই ২৪ আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে মেরে গুরুতর আহত করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। আহত আকাশকে লুবনা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এভার কেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মাইলস্টোন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন ওমর জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে আমাদের ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে বহিরাগতরা এসে ক্যাম্পাসের ভিতরে থাকা কনফারেন্স রুমের সামনে হামলা চালায়। যারা এই হামলা চালিয়েছে তারা কেউ মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী ছিল না। আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা দিয়ে রাকি। কিন্তু তাতেও তারা থামেনি। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। যার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ।
ফয়সাল বিন ওমর আরও বলেন,মাইলস্টোন কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাওলাদার পুরো বিষয়টি পরিকল্পিত ভাবে করেছে। আমরা বিকাল ৩টায় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে আসি। পরবর্তীতে আইডিকার্ড চেক করে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রশাসন।
এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং চুক্তিভিত্তিক সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষাবভনে ঘেরাও করতে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষাভবন থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে সচিবালয় ঘেরাও করে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনেও অনুপ্রবেশ করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এই আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয় সচিবালয় যাওয়ার। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছিল তখন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক ঘণ্টায় অন্তত ১০টি পোস্ট শেয়ার করা হয়। যেখানে সব পোস্টেই আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়া হয়। এছাড়াও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সহিংসতায় ‘উসকানি’ দিচ্ছেন এবং অংশ নিচ্ছেন, যার বিভিন্ন স্ক্রিনশট ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সচিবালয়ে ঘেরাও করতে আসা আন্দোলনকারী অনেককেই নিজেদের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করলেও নিজেদের পরিচয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেনি।
সচিবালয়ের সামনে থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আটকের সময় তারা বলছিল, দোকানের শ্রমিক তারা। কিন্তু পরে তারা স্বীকার করেছে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের ডাকে সারা দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতেই তারা সচিবালয়ের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে যোগ দেয় এবং সংঘর্ষে জড়ায়।
পুলিশের ধারণা, রাষ্ট্রীয় শোক চলছে ঠিক সেদিনই পরিবেশ নষ্ট করতেই একটি নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা সুযোগ নিয়ে ঝামেলা তৈরি করতে এসেছিল। তাদের বেশিরভাগই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ শুরু থেকে কিছুই বলেনি। এরপরেও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক সচিবালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও সেনা সদস্যরা দুবৃত্তদের সরিয়ে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন আটক রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
চট্টগ্রামে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের এই আন্দোলনেও অনুপ্রবেশ করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে টেলিগ্রামের একটি গ্রুপে আলোচনা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে রাউজান পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেক বলেন, এমপি মহোদয়ের পরিবারের সদস্যদের নির্দেশে আমরা ৪০-৫০ জনকে আন্দোলনে ঢুকিয়ে দিয়েছি। সে সময় অপর পাশ থেকে ‘জয় বাংলা জুম ব্রিগেড’- নামে একটি প্লাটফর্মের মুখপাত্র সাজ্জাদুল আনাম বলেন, যত পারো ঢুকিয়ে দাও, বসে না থেকে কাজ করো।