
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জনগণ পরিবর্তন চায়। গত ১৬-১৭ বছরে যে দুঃশাসন, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও অপকর্ম জনগণ দেখেছে, সেই নির্যাতন, নিষ্পেষণ, অপকর্মের দিকে মানুষ আর ফিরে যেতে চায় না। তারা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, যা পরিচালিত হবে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠিক তেমন একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়তে চায়, যেখানে থাকবে না কোনো অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি ও দুঃশাসন। থাকবে পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। রাষ্ট্রের মালিকানা থাকবে জনগণের, আর শাসক হবে সেবক। যেখানে শাসক কখনো শোষক হবে না, লুটপাট করবে না, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন করবে না। তাই একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন এবং আগামী নির্বাচনে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করুন।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেল ৫টায় শিরোমণি হাফিজিয়া মাদরাসা অডিটোরিয়ামে খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনের ভোট কেন্দ্র পরিচালক, থানা পরিচালক ও সদস্য সচিব, ইউনিয়ন পরিচালক ও সদস্য সচিব এবং আসন কমিটির প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনী আসন কমিটির আহ্বায়ক মুন্সি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুসের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা অফিস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম, বায়তুলমাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির, ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, খানজাহান আলী থানা আমির ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, ফুলতলা উপজেলা সেক্রেটারি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খান, খানজাহান আলী থানা সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, ডুমুরিয়া উপজেলা সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা শেখ মো. আলাউদ্দিন, ড. আজিজুল হক, মাস্টার মফিজুল ইসলাম, মো. শরিফুল ইসলাম, হাফেজ আল-আমিন গাজী, মাস্টার মিজানুর রহমান, মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, সংসদ হলো পার্লামেন্ট-আইনসভা। যেখানে রাষ্ট্র কিভাবে চলবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে, দেশের উন্নতি অগ্রগতি কেমন হবে, দেশের অর্থ ব্যবস্থা কেমন হবে—বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশ পরিচালিত হবে। অথচ আমাদের দেশের শাসকগণ ক্ষমতায় গিয়ে এসব ভুলে নিজেদের পকেট ভারী করতে সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন করে থাকে। ফলে দেশের মানুষ রাষ্ট্র থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না। একটা দেশের উন্নতি-অগ্রগতি নির্ভর করে তার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থার শৃঙ্খলার উপর। কিন্তু গত ৫৪ বছরে কোনো সরকারই এ দেশের টেকসই উন্নয়ন করতে পারেনি। আপনারা জানেন, গত জোট সরকারের আমলে জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী ছিল কিন্তু দুইটা মন্ত্রণালয়ে আলহামদুলিল্লাহ এক টাকার দুর্নীতির রেকর্ড নাই। সুতরাং টেকসই উন্নয়ন বাংলাদেশ গড়তে, সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়তে জামায়াতে ইসলামীর কোনো বিকল্প নাই।
এর পূর্বে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সকালে ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ, পথসভা ও মহিলা সমাবেশে বক্তৃতা করেন। জামিরা ইউনিয়ন আমির মো. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ। সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্লা, সেক্রেটারি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খান, থানা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মো. আলাউদ্দিন, জামায়াত নেতা ফ ম আব্দুর রহমান, নূর আলী আকুঞ্জি, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ গোলাম হোসেন শেখ, অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবির, ওয়াহিদুজ্জামান বাবু, ছাত্রশিবির নেতা ইরান মেল্লো, মো. আশিকুজ্জামান প্রমুখ। এ সময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জামিরা বাজার আসমোতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পিপরাইল বাজার সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদরাসা, শুক্লা স্মরণিকা বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং ওই এলাকার সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কবর জিয়ারত করেন।
জামিরা ইউনিয়নের পথসভায় সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমাদের দেশের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মুসলমানের বসবাস হলেও গত ৫৪ বছরে কুরআনের শাসন কায়েম হয়নি। দেশে যদি কুরআনের শাসন কায়েম থাকতো, তাহলে মানুষ প্রকৃত সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারত। শাসকের ভিতর যদি আল্লাহর ভয় থাকে, তাহলে ওই শাসক কখনো দুর্নীতি, অত্যাচার, লুটপাট, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করতে পারে না। তাই কুরআনের শাসন কায়েম করতে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থী আল্লাহওয়ালা লোকদেরকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা.) কে সত্য দ্বীন সহকারে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, সকল মত পথের ঊর্ধ্বে আল্লাহর আইনকে বিজয় করতে। রাসূল (সা.) মদিনায় একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, যার মূল ভিত্তি ছিল কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত নবীজির রাষ্ট্রে সুদ, ঘুষ, যেনা, ব্যাভিচার, দুর্নীতি, দুঃশাসন ছিল না। ঠিক আমরাও যদি এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারি, তাহলে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে।
জামায়াত বিশ্বাস করে, শাসকের ভিতর যদি আল্লাহর ভয় থাকে, পার্লামেন্টে যদি আল্লাহর আইনের পক্ষের লোক বেশি হয় তাহলে দেশ কুরআনের আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধির ভিতর যদি আল্লাহর ভয় থাকে, তাহলে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী আসমান ও জমিনের সকল বরকতের দরজা খুলে দিবে। কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশের শাসন চলবে, জালেমের হাত দুর্বল হবে আর মজলুমের হাত শক্তিশালী হবে।
ইসলামপন্থীদের ঐক্যের বিষয়ে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এত দিন আলেম-ওলামাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে দেশ কুরআন অনুযায়ী পরিচালিত হয়নি। এখন আলেম-ওলামারা বুঝতে পেরেছে, কুরআনের শাসন চালু করতে হলে নিজেদের ভিতর ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে। তাইতো আলেম-ওলামারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইসলামপন্থীদের একটা ভোট বাক্স থাকবে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। নেতৃত্বের সব জায়গায় অসৎ লোক বসে আছে। সুতরাং আগামীর নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অসৎ নেতৃত্ব দূর করে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিগত পতিত সরকারের দুঃশাসনের বর্ণনা দিয়ে সাবেক এই এমপি বলেন, দুই হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ববরণের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতাকে ভুলুণ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম একটি সৎ, মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব চায়, যারা মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করবে। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগান হলো, আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। সুতরাং তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে জামায়াতের সৎ নেতৃত্বের বিকল্প নাই।
আফরোজা