বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, অতিদ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নাই। নির্বাচন বিলম্বিত করতে মহল বিশেষের অপচেষ্টায় পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠী লাভবান হবে। দুই তিনটি দল প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে জনগণের সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করতে নিত্য নতুন ইস্যু তৈরি করে জটিলতা বাড়াচ্ছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে জামগড়া লিবার্টি কিন্ডার গার্টেন মাঠে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন শেষে কৈচাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর এবং সন্ধ্যায় নলুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড সম্মেলনে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে অভ্যুত্থান নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্টের দোসরেরা ধৃষ্টতাপূর্ণ অপপ্রচার করছে।
ফ্যাসিবাদের পতনের এক বছর যেতে না যেতেই অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈক্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সুযোগে ফ্যাসিস্টদের আস্ফালনে জনগণ ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্য যখন সুদৃঢ় থাকার কথা, তখন গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী, অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক এবং অবাস্তব বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে জাতীয় ঐক্যে চিড় ধরানো হচ্ছে। লন্ডন বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে রোজার আগেই নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হওয়ার পর এসব নিত্য নতুন ইস্যু সামনে এনে জটিলতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে।
বিএনপি গণতন্ত্র ও ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে সংস্কার প্রশ্নে অনেক ছাড় দিয়েছে উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ৯০ শতাংশ সংস্কারের সঙ্গে বিএনপি একমত হওয়ার পরও কেউ কেউ এমন ধারণা প্রচার করছে যে, বিএনপির অনীহার কারণে সংস্কার প্রক্রিয়া এগুচ্ছে না, যা সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে জনগণ ও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হবে। নির্বাচনের পর জনগণ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন এবং জনআকাঙ্ক্ষা ও জনগণকে প্রদত্ত ওয়াদা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে নেতাকর্মীদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি তারেক রহমানের ৩১ দফা ও জনকল্যাণে প্রতিশ্রুতি সমূহ নির্ভুলভাবে জেনে তা জনগণকে অবহিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর জনগণের রায়ে সরকার গঠন করলে বিএনপি জনগণের জন্য কী করবে তা ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অপরাপর রাজনৈতিক দলের এ ধরনের কর্মসূচি নেই। তারা ব্যস্ত বিএনপি সম্পর্কে অপপ্রচারে এবং নির্বাচন বিলম্বিত করতে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির কর্মসূচির নামে গণঅভ্যুত্থানের একক দাবিদাররা বিভিন্ন এলাকায় পদযাত্রার নামে গাড়িযাত্রা করে নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দলীয় কুপনের নামে বেহেশতের টিকিট বিক্রেতারাও প্রার্থী ঘোষণা করে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এরা ভোটার মাঠে জনগণের সমর্থন না পেয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে এসব কথা বলছেন।
তিনি উপজেলাব্যাপী দলীয় সদস্য নবায়ন ও নতুন প্রাথমিক সদস্য অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম দলীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। সমাজবিরোধী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, দুর্নীতিবাজসহ আওয়ামী দোসররা যাতে দলে জায়গা না পায় সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
কৈচাপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. সাঈদ উর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আশরাফ, মিজানুর রহমান, শফিকুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার রসূল খোকন, মির্জা মিজান, রুহুল আমিন ফকির, আবুল কাশেম সরকার, মির্জা আবুল বাশার, সায়েদুর রহমান হারুন, নূর হোসেন, ভেকিপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ছয়ফল, নৈয়রিকুরা গ্রামের বিএনপি নেতা হাফেজ সাইফুল ইসলাম, জামগড়া গ্রামের বিএনপি নেতা লিটন মিয়া, নলুয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, আতকাপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আবু নাসের, পাগলপাড়া গ্রামের সায়েদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ডসমূহের বিএনপির সদস্যগণ তাদের দলীয় সদস্য পদ নবায়ন করেন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গারো সম্প্রদায়ের মানুষ বিএনপিতে যোগদান করে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
সম্মেলনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদে সায়ফুল ইসলাম ছয়ফল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে হাফেজ সাইফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
ইমরান