ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

রংপুরে জামায়াতের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার

আমরা জীবন দিয়েছি তবুও পাকিস্তানে পালাইনি, আপনি ভারতে পালিয়েছেন

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৪ জুলাই ২০২৫

আমরা জীবন দিয়েছি তবুও পাকিস্তানে পালাইনি, আপনি ভারতে পালিয়েছেন

ছবিঃ সংগৃহীত

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, “যারা বলেছিল পালায় না, তারা পালিয়েছে। কিন্তু আমাদের পাকিস্তানি বলা হলেও আমরা পালাইনি।”

শুক্রবার (৪ জুলাই) রংপুরে জামায়াতের এক বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন:

“তিনি কি বলতেন? শেখের বেটি পালায় না। আমরা পালাই নাই, আমাদের কোন নেতা পালায় নাই। কিন্তু আপনি পালিয়েছেন। কোথায় পালিয়েছেন? যেখানে আপনাদের আসল ঠিকানা। আমি কারাগারে ফাঁসির কাষ্টে ঝোলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানত না। আজকে আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লক্ষ জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি, আল্লাহর রহমত। যে গলায় আমার দড়ি রশি ঝোলানোর কথা ছিল, সেখানে আমার ফুলের মালা পড়ে। সবই আল্লাহর রহমত।”

তিনি বলেন, “৫ই আগস্ট আমরা জেলখানায় ছিলাম। আমরা কল্পনাও করিনি যে হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? আল্লাহ যে অনেক কিছুই করতে পারেন মনে হলো, আল্লাহ সরাসরি এই বিপ্লব ঘটার ব্যবস্থা করেছেন। মনে হলো লক্ষ লক্ষ লোক আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, কারাগার থেকে লক্ষ লক্ষ লোক রাজপথে নেমেছে। মনে হলো আবাবিল পাখির মত হাজির হয়েছে লক্ষ লক্ষ লোক। আল্লাহর ফেরেশতারা হাজির হয়েছেন এবং তাঁর পতন হয়েছে।”

মীর কাসেম আলীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের শহীদ মীর কাসেম আলীর মামলা যখন চলে, তখন তিনি আমেরিকায় ছিলেন। তাকে বলা হয়েছে—আপনি আসবেন না, বাংলাদেশে বিচারের সম্মুখীন হবেন। উনি বলছেন, কেন আমি যাব? আমি কি অপরাধ করেছি? মৃত্যু হলে আমেরিকাতেও তো হবে, বাংলাদেশেও হবে। তিনি আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। তাকে ফাঁসি দিয়ে শাহাদত করা হয়েছে।”

“তাহলে কারা এই দেশের জনগণকে ভালোবাসে? কারা এই দেশের জনগণের পক্ষে কাজ করে? যারা পালিয়ে যায় তারা, নাকি যারা মৃত্যু সম্মুখীন হওয়ার পরও দেশ থেকে—বিদেশ থেকে দেশে আসে তারা? আসল তারাই দেশপ্রেমিক। তাদের দ্বারাই দেশ রক্ষা পেতে পারে। তাদের দ্বারাই দেশের সীমানা রক্ষা হতে পারে।”

“সংগ্রামী ভাই বন্ধুগণ, আজকে বাংলাদেশের জনগণকে চিন্তা করতে বলব—আবেগ দিয়ে ৫৪ বছর কাটিয়ে দিলাম। অনেক স্লোগান দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করলাম। কিন্তু জাতির কোন কল্যাণ করতে পারলাম না। আমাদের সত্যিকার অর্থে আধিপত্যবাদ বিরোধী শক্তি, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সবসময় যারা থাকে, যারা দেশে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে না—তাদের দ্বারাই দেশ নিরাপদ। তাদের দ্বারাই দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ। তাদের দ্বারাই দেশের জনগণের অধিকার নিরাপদ।”

“আগামী নির্বাচনে সেই চিন্তা আমাদের মাথায় অবশ্যই রাখতে হবে। আবু সাঈদ কেন জীবন দিয়েছে? আবু সাঈদ কি তার নিজের কোন সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য জীবন দিয়েছে? তার ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন জীবন দিয়েছে? না। সে দেশের স্বার্থে জীবন দিয়েছে। সে এমন বৈষম্যমুক্ত একটা বাংলাদেশ চেয়েছিল।”

“কিন্তু বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে কোথা থেকে? সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের ভোটের কোন অধিকার ছিল না। সাড়ে ১৫ বছরে গণতন্ত্র ছিল না। সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের বাক স্বাধীনতা ছিল না। সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের সীমানা রক্ষিত ছিল না। এই সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কোন স্বাধীনতা ছিল না। আধিপত্যবাদী শক্তি, রাজনৈতিক থাবা এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের মূল ঈমানি শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। আমাদের যুবশক্তির চরিত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে।”

শেষে তিনি বলেন, “আজকে সেখান থেকে আমাদের দেশকে আবার নতুন করে গড়তে হবে। এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে আবু সাঈদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আবু সাঈদের স্বপ্ন ছিল একটা আধিপত্যবাদ মুক্ত বাংলাদেশ। আবু সাঈদের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আবু সাঈদের স্বপ্ন ছিল যার যার ভোট নিজের পছন্দ বাক্সে ভোট দিতে পারবে—এইরকম একটি বাংলাদেশ। আবু সাঈদের স্বপ্ন ছিল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হোক।”

“এই বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে এই বাংলাদেশের ৫৪ বছরে অনেক আইন, অনেক কিছু পরীক্ষা হয়েছে। কোন আইন দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি নিশ্চিত হয় নাই। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আর তা হচ্ছে—আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে মুক্তি পেতে পারে। আসুন আমরা সেই আগামী দিন, আল্লাহর সন্তুষ্টির শাসনের আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই এবং সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা সবাই সামনে দিকে এগিয়ে যাই।”

সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/v/1LRY8jZfds/

ইমরান

আরো পড়ুন  

×