ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

যে কারণে ঝাঁকে ঝাঁকে যুক্তরাজ্য ছাড়ছে ইহুদিরা

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২ জুলাই ২০২৫

যে কারণে ঝাঁকে ঝাঁকে যুক্তরাজ্য ছাড়ছে ইহুদিরা

ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাজ্যে আবারও বাড়ছে ইহুদি বিদ্বেষ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই বিদ্বেষ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনীতি ও গণমাধ্যমেও। ১৯৩০-৫০-এর দশকে ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষের যে বিভীষিকাময় ইতিহাস ছিল, আজ তারই প্রতিচ্ছবি যেন নতুন রূপে ফিরে এসেছে ব্রিটেনে। দেশটিতে বসবাসরত ইহুদি নাগরিকরা এখন চরম ভয়, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

সোমবার জেরুজালেম পোস্ট-এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার অভাবে অনেক ব্রিটিশ ইহুদি যুক্তরাজ্য ছেড়ে ইসরাইল বা অন্য কোনো নিরাপদ দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এক সময় ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু গত এক দশকে এ সম্পর্কের নাটকীয় অবনতি ঘটে। একদিকে দেশটির রাজনীতিতে জেরেমি করবিনের উত্থান, অন্যদিকে ব্রিটিশ সমাজ ও সরকারের ইসরাইল ও ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন—সব মিলিয়ে ইহুদি বিদ্বেষের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় সংগীত ও সংস্কৃতি উৎসব ‘গ্লাস্টনবেরি ফেস্টিভ্যাল’-এ এবারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইহুদি ও ইসরাইলবিরোধী স্লোগান। উৎসবের মঞ্চে প্রকাশ্যে ইসরাইলবিরোধী বক্তব্য এবং ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক স্লোগান দেওয়া হয়। এতে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।

উৎসবে পারফর্ম করা ব্রিটিশ র‍্যাপার বব ভাইলান তার পরিবেশনার সময় বারবার ‘ডেথ টু দ্য আইডিএফ’ (আইডিএফ নিপাত যাক) স্লোগান দেন। মঞ্চে উপস্থিত হাজারো দর্শকও তাতে সাড়া দেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্রিটিশ পুলিশ বিষয়টি তদন্তে নামে।

এ ঘটনায় আরও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ঘিরে। জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ব্রিটিশ ইহুদি আইনজীবীদের সংগঠন ‘ইউকে লইয়ারস ফর ইসরাইল’। সংগঠনটির দাবি, বিবিসি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান ব্রিটিশ আইনে ‘জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার’ পর্যায়ে পড়ে।

অনেক বিশ্লেষক এবং ব্রিটিশ ইহুদি নেতারা এই ঘটনাগুলোকে কেবল ‘ইসরাইলবিরোধিতা’ বলে মনে করছেন না; বরং তারা এগুলোকে স্পষ্টভাবে ইহুদি বিদ্বেষ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের (সিএসটি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্যে ইহুদি বিদ্বেষমূলক ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে ইহুদিদের ওপর যত বিদ্বেষমূলক হামলা হয়েছে, অতীতে কোনো বছরেই এত বেশি হামলার রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর, স্কুলে ইহুদি শিশুদের হয়রানি, ইহুদি এমপিদের নিশানা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জায়োনিস্ট’ অপবাদ দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের অপমান বা বিতাড়ন।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে ইহুদি বিদ্বেষ ছিল বহুমাত্রিক। রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যম, সমাজ, এমনকি শরণার্থী নীতিতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। ১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে কিছু ব্রিটিশ পত্রিকা ও প্রকাশনা ইহুদিদের ‘লোভী’, ‘ষড়যন্ত্রী’ বা ‘বিদেশি দখলদার’ হিসেবে চিত্রিত করত।

বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সেই সময়কার ঐতিহাসিক বিদ্বেষের সাদৃশ্য দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছেন—ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য যুক্তরাজ্যে বসবাস দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সায়মা ইসলাম

×