
এবার রাজশাহী অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়েছে আমের। ১০ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে, যা বড় সুখবর। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকায় রপ্তানি হবে আম, যাচ্ছে চীনেও। এক যুগে আমের বাণিজ্যিক আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। শিশু থেকে বুড়ো, গরিব থেকে ধনী- প্রত্যেকের রসনা তৃপ্ত করে এই সুস্বাদু রসালো ফলটি। এবার প্রচুর ফলন হয়েছে আমের। সব মিলিয়ে গ্রীষ্মে ফলসম্পদের সমাহারে সত্যিই রাজার আসন পেতে বসেছিল এই উপকারী ফল। সুস্বাদু আম একদল অসাধু লোকের কারণে রীতিমতো বিষে পরিণত হয়েছিল। ‘কেমিক্যালমুক্ত আম’- এমন ব্যানার ঝুলিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবু ক্রেতাদের সন্দেহ ঘুচতো না- প্রিয়জনদের জন্য মারণব্যাধির বীজ কিনছি না তো!
আম ভারত উপমহাদেশ ও এশিয়ার একটি বিশেষ ফল। আম শরীরের জন্যও খুব কার্যকরী। আমে রয়েছে ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, প্রোটিন, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ফলিক এসিড, জিংক, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি। একসঙ্গে এত ভিটামিন, মিনারেল ও শরীরের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান খুব কম ফলেই আছে। আমে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি একত্রে পাওয়া যায়। তাই আমকে বলা যায় সব রোগের জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধক। আমের ভিটামিন ‘এ’ গর্ভস্থ শিশুর জন্যও উপকারী। তারুণ্য বজায় রাখতে এর ভূমিকা অপরিসীম। এতে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দাঁত, নখ, চুল মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
আম গাছের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের আলাদাভাবে কিছু করার নেই, শুধু তাকে নিজের মতো করে বাড়তে দিতে হবে। কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক যেন তাকে বিকৃত না করে। আমকে বলা যায় সব রোগের জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধক। এমন একটি ফল নষ্ট হবে, এটি কোনো কাজের কথা নয়। তাই ফলের জন্য বিখ্যাত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সরকারিভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টোররুম অথবা আধুনিক প্রযুক্তিতে ফল সংরক্ষণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে ফলচাষিরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন। সেই সঙ্গে বিদেশী ফলের আমদানিও অনেকাংশে কমে যাবে। ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা রাখা হয়। এতে ফলের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। নিম্ন তাপমাত্রার কারণে ফলের মধ্যকার জারকের ক্রিয়া সীমিত থাকে এবং উচ্চ আর্দ্রতার কারণে এগুলো শুকিয়ে সঙ্কুচিত হয় না। আনারস, কমলালেবু, কাঁঠাল, নাশপাতি ইত্যাদি ফল টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। প্রক্রিয়াজাত করেও আমসহ বিভিন্ন ফল সংরক্ষণ করা যায়। তবে কৃষিপণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। তাতে আমচাষিসহ অন্য চাষিরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
প্যানেল